বাংলাদেশে নিয়ম অনুযায়ী শেয়ার বাজারে নিবন্ধিত কম্পানিকে বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমার সময় নিরীক্ষা (অডিট) প্রতিবেদনও জমা দিতে হয়। নিয়ম মেনে প্রতিবছর শেয়ার বাজারের নিবন্ধন কার্যালয়ে অন্তত ৪৬ হাজার প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয়কর বিবরণীর সঙ্গে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা পড়ে। এ ধরনের নিরীক্ষা সনদে স্বাক্ষর করেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা। ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ, আইসিএবির হিসাবমতে, প্রতিবছর তাদের সদস্যরা মাত্র ৩৫ শতাংশ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করে থাকেন। প্রশ্ন থেকে যায় বাকি ৬৫ শতাংশ নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে। আইসিএবি বলছে, এই ৩০ হাজার কম্পানির প্রতিবেদনই ভুয়া।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বা তালিকাবহির্ভূত সব কম্পানির ক্ষেত্রেই আর্থিক প্রতিবেদন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে ব্যাংক ঋণ দেয়, রাজস্ব নির্ধারিত হয়, এমনকি শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কিছু কম্পানি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে নানা কারসাজি ও অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছে। প্রতিবছর ৪৬ হাজার কম্পানি নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে। কিন্তু আইসিএবির সদস্যরা মাত্র ১৬ হাজার নিরীক্ষা প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করে। অর্থাৎ ৩০ হাজার কম্পানি প্রতারণায় জড়িয়ে পড়ছে।
জানা যায়, একাধিক কম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে অনিয়মের প্রমাণও মিলেছে। একটি আর্থিক প্রতিবেদন দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন আবার ভিন্ন প্রতিবেদন দেখিয়ে রাজস্ব দিয়েছেন কম। শেয়ারবাজার থেকে অর্থ তুলে নিতেও আর্থিক প্রতিবেদনে কারসাজির উদাহরণ মিলেছে। ভিন্ন উদ্দেশ্যে ভিন্ন আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির সংস্কৃতি দেশের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনেক দিন ধরেই চলে আসছে।
প্রায় ৭৮ হাজার প্রতিষ্ঠান কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিলেও এর অর্ধেক আয়কর রিটার্ন জমা দেয় না। অনেক কম্পানি আছে, যারা অডিট না করেই অডিট রিপোর্ট জমা দেয়। দেখা গেছে, কম্পানি নানা কাজে ব্যবহারে একই বছরের জন্য তিন-চারটি পর্যন্ত অডিট রিপোর্ট জমা দেয়। কিছু ক্ষেত্রে এমন জালিয়াতির সঙ্গে আইসিএবির সদস্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে। তাতে পুরো প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
আর্থিক প্রতিবেদনকেন্দ্রিক জালিয়াতি রোধে এফআরসি কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা চর্চায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও করপোরেট খাতে সুশাসন নিশ্চিতে ডিভিএস ব্যবহারের জন্য গতকাল আইসিএবির সঙ্গে এক চুক্তি করে এফআরসি। এফআরসির চেয়ারম্যান ড. মো. হামিদ উল্লাহ ভূইয়া এবং আইসিএবির প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ ফারুক এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এখন থেকে আইসিএবির নিবন্ধিত যেকোনো হিসাববিদের প্রস্তুত করা প্রতিটি নিরীক্ষিত হিসাব প্রতিবেদনসহ যাবতীয় তথ্য ডিভিএসে আপলোড করতে হবে। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে এনবিআরে জমা দেওয়া নিরীক্ষিত হিসাব প্রতিবেদন সঠিক কি না, তা যাচাই করতে পারবেন কর কর্মকর্তারা। আইসিএবির তথ্যভান্ডারের (ডেটাবেইস) সঙ্গে এনবিআরের তথ্যভান্ডার মিলিয়ে দেখবেন। যেসব প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য আইসিএবির তথ্যভান্ডারে থাকবে না, এখন থেকে সেসব প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
ডিভিএস কার্যকর হলে দুই বা তিন ধরনের আর্থিক বিবরণী তৈরি করা বন্ধ হবে। একটি একক নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী তৈরির প্রবণতা তৈরি হবে। এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার পর এফআরসির প্রধান লক্ষ্যআর্থিক বিবরণী মনিটর করা, তা অর্জিত হবে। আর্থিক বিরবণীর ট্রু অ্যান্ড ফেয়ার ভিউ যাচাই করা সম্ভব হবেবলে এফআরসি চেয়ারম্যান মনে করেন।
এফআরসির চেয়ারম্যান ড. মো. হামিদ উল্লাহ ভূইয়া বলেন, তালিকাভুক্ত কম্পানি দেশের জিডিপিতে মাত্র ৯ শতাংশ অবদান রাখছে, যা খুবই কম। যদি কম্পানিগুলো সঠিক নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী জমা দেয় তাহলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আরও বৃদ্ধি পাবে।
এসডাব্লিউ/ডিআর/এসকেএইচ/আরা/১৬৫০
আপনার মতামত জানানঃ
![Donate](https://statewatch.net/wp-content/uploads/2021/06/xcard.jpg.pagespeed.ic.qcUrAxHADa.jpg)
আপনার মতামত জানানঃ