টাঙ্গাইলে প্রায় প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিনই জেলাটির কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ না কেউ প্রাণ হারাচ্ছে। এতে করে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে টাঙ্গাইল যেন হটস্পটে পরিণত হয়েছে। কেবল বিগত দেড় মাসেই টাঙ্গাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরেছে ২৬ জনের। এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশই ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ককে কেন্দ্র করে। এছাড়া টাঙ্গাইলে এখানে সেখানে বিচ্ছিন্নভাবেও ঘটছে প্রাণঘাতী সড়ক দুর্ঘটনা।
টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরে জেলায় ১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন সাতজন আর আহত হয়েছেন ৪২ জন। ডিসেম্বরে টাঙ্গাইল সদরে পাঁচ, মির্জাপুরে ছয়, কালীহাতিতে তিন, নাগরপুর ও বাসাইলে একজন করে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৬ জন। এর মধ্যে চারদিনেই ১৪ জন নিহত হয়েছেন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে।
জানা যায়, ৪ ডিসেম্বর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলায় থেমে থাকা যাত্রীবাহী বাসে ট্রাকের ধাক্কায় ছয়জন নিহত এবং ১০ জন আহত হন। ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের কান্দিলা এলাকায় ট্রাকের সঙ্গে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা সবজিবোঝাই পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন আরো পাঁচজন। এছাড়া গত ৩০ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ দিনে ৮টি স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত এবং অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
শীতের শুরুতেই দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমান সময়ে ভোরে কিংবা সকালে ঘন কুয়াশার জন্য সড়ক দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। এছাড়া চালকের অসর্তকতা ও অদক্ষতা এবং বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোয় এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিছু কিছু রাস্তায় এখনো সমস্যা রয়েছে। আবার অনেক চালকের লাইসেন্স এবং প্রশিক্ষণ নেই। অনেক সময় চালকেরা নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালান। আর এতে মুখোমুখী সংঘর্ষ এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এক্ষেত্রে চালকদের শিফটিং পদ্ধতিতে অনুসরণ করলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সমভব বলে মনে করেন অনেকে।
এ প্রসঙ্গে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কমিটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আল ঝান্ডা চাকলাদার বলেন, “উত্তরবঙ্গের গাড়ি বেশি বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। অনেক সময় থ্রি হুইলার গাড়িগুলো মহাসড়কে চলাচল, ট্রাকের অতিরিক্ত মালামাল বহন, দ্রুতগতিতে লেন পরিবর্তন, প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা, ক্রুটিপূর্ণ ও আনফিড গাড়ি চালানো, লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং, দুর্বল সড়ক ব্যবস্থাপনা, ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার, বিরতি ছাড়াই দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি চালানো, আনফিট গাড়ি বন্ধে আইনের প্রয়োগ না থাকা এবং দীর্ঘ পথে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ ইত্যাদি কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।” তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, “বিআরটিএ ঠিক মতো মনিটরিং করে না।”
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, টাঙ্গাইলে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনার মতো ঘটনা ঘটলেও সরকারের তরফ থেকে তা প্রতিরোধে বিশেষ কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। শীতের সময় দুর্ঘটনা বেড়ে গেলেও লক্ষ্য করা যায়নি কোনো বাড়তি ব্যবস্থা। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি ২০১৩ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) সভায় অনুমোদিত হওয়ার পর কাজ শুরু করা হয় ২০১৬ সালে। দীর্ঘ চার বছর পেরিয়ে গেলেও কাজের অগ্রগতি ধীরস্থির।
মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ এখনো শেষ হয়নি। সাথে বাকি রয়েছে কয়েকটি ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাসের কাজ। এ মহাসড়কের এলেঙ্গা হতে টাঙ্গাইল রাবনা বাইপাস পর্যন্ত একপাশের সার্ভিস লেনের কাজ শেষ হয়েছে। আবার রাবনা বাইপাস হতেও মহাসড়কের পশ্চিমের সার্ভিস লেনের কাজ চলছে। কিন্তু পূর্ব বা ঢাকামুখী সার্ভিস লেনের কাজ শুরুই হয়নি। এতে সিএনজি, ছোট ছোট পরিবহন মহাসড়কে উঠে পড়ছে। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটছে।
এসডাব্লিউ/বিবি/এসকেএইচ/আরা/১৪৪০
আপনার মতামত জানানঃ