সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় সাইবার হামলা করেছে। আলজাজিরার বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের মোবাইল ফোন হ্যাক করা হয়েছে বলে এই দুই দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তের তালিকায় আছেন ইসরাইলও। হ্যাকিংয়ে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে সেটি ইসরায়েলি কম্পানি ‘এনএসও গ্রুপ’তৈরী করেছে বলে দাবি করেছে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সিটিজেন ল্যাব’। গত রবিবার(২০ ডিসেম্বর) এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিটিজেন ল্যাব। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর একদল গবেষক। তাতে বলা হয়েছে, হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া সাংবাদিকদের মধ্যে আলজাজিরার প্রতিবেদক, প্রযোজক, উপস্থাপক ও নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তারা রয়েছেন।
ঠিক কী কারণে হ্যাক করা হয়েছিল, সে বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। তবে, সিটিজেন ল্যাব সবমিলিয়ে চার জন অপারেটরের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে, এবং দেখে মনে হয়েছে সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত থেকে চালানো হয়েছিল ওই হামলা।
আলজাজিরার সাংবাদিকদের ফোন হ্যাক করার ঘটনা ধরা পড়ে এর অনুসন্ধানী সাংবাদিক তামের আলমিশালের ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে।নিজের ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়াতে তামের আলমিশাল সিটিজেন ল্যাবের দ্বারস্থ হন। তখন সিটিজেন ল্যাব তদারকি করে দেখতে পায়, তার ফোনের সঙ্গে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসওর সার্ভার যুক্ত। তামের সেই সার্ভারের লিঙ্কে ক্লিক না করলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার তথ্য চলে যাচ্ছে ওই স্পাইওয়্যারে। এরপরই আরো ৩৬ জন সাংবাদিকের ফোন হ্যাক হওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। হ্যাকাররা সাংবাদিকদের ফোন থেকে বিভিন্ন ছবি ও তথ্য হাতিয়ে নেয়। এরপর সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব কর্মকাণ্ডে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অপারেটররা জড়িত।’
তামের আলমিশাল জানান, কয়েক মাস আগে একটি প্রতিবেদনের জন্য তাঁকে ফোন করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। যে ধরনের নম্বর থেকে ফোন দেওয়া হয়েছিল, সেটি সাধারণত সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ব্যবহৃত হয়।
হ্যাকিংয়ের শিকার এক সাংবাদিক রানিয়া দ্রিদি। তিনি আল আরাবিতে কর্মরত। নারী অধিকার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত নিয়ে সমালোচনার কারণে হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে তার বিশ্বাস।
সিটিজেন ল্যাবের গবেষকরা সাংবাদিকদের ফোন হ্যাক হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে আইফোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন এবং এর উন্নতি ঘটানোর জন্য পরামর্শও দিয়েছেন। তারা দেখতে পেয়েছেন, যেই প্রযুক্তিতে আলজাজিরার সাংবাদিকদের তথ্য চুরির কথা হয়েছে, সেটি বিশেষ করে আইফোনের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর।
এ বিষয়ে আইফোনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান-অ্যাপল এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “আমরা এই গবেষণার মাধ্যমে যা দেখতে পাচ্ছি, তা হলো বিভিন্ন রাষ্ট্রশক্তি তাদের টার্গেট কিছু সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।”
এই পরিস্থিতিতে অ্যাপল তার ব্যবহারকারীদের সবসময় সফটওয়্যারের সর্বশেষ সংস্করণ নামিয়ে ব্যবহারের অনুরোধ করেছে।
হ্যাক করার এই প্রযুক্তিটা বানিয়েছে ইসরায়েলের এনএসও গ্রুপ।তারা জানায়, প্রযুক্তিটি শুধু তারা বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে বিক্রি করে এবং সরকারের সেটি শুধু সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের তথ্য জানতে ব্যবহার করার কথা।তবে আলজাজিরার সাংবাদিকদের ফোন হ্যাকিংয়ের ঘটনার মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানটির তৈরী এই প্রযুক্তি ব্যবহারের অভিযোগ উঠলো।
এর আগেও মরোক্কোর সাংবাদিকদের ফোন হ্যাকিং করা হয়েছে এটি দিয়ে। এছাড়া রুয়ান্ডার বিরোধী দলসমূহের নেতাকর্মী, স্পেনের রাজনৈতিক, টোগোর গণতন্ত্রকামীদের ফোনও একইভাবে হ্যাক করা হয়েছে এনএসও’র স্পাইওয়্যার দিয়ে।
এই স্পাইওয়্যারটি দিয়ে সাধারণত হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করা হয়, যার কারণে হোয়াটসঅ্যাপ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলাও করেছে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও’র বিরুদ্ধে।
এসডব্লিউ/কেএইচ/২৩১৫
আপনার মতামত জানানঃ