সম্প্রতি দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এসব অপরাধ ও অপকর্মের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘৃণ্য অপরাধও আছে।
মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, ভাঙচুর, ফোন ও টাকা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজীদ বোস্তামী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহ আদালতে নালিশি মামলাটি করেন নগরের বায়েজীদ বোস্তামী থানার আমিন জুট মিল এলাকার মো. রুবেল।
মামলার বাকি আসামিরা হলেন বায়েজীদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজাহার ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, নাজিবুল ইসলাম, তানভীরুল আজম, বশির গাজী, আসাদুর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. শাহাদাত, আবুল হাশেম, সাইফুল ইসলাম, আবদুল মালেক, লিটন শীল ও মো. রবিউল এবং পুলিশের সোর্স মো. শাহজাহান।
বাদীর আইনজীবী আজিজুল হক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আদালত বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদ মর্যাদার কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্তের জন্য বলেছেন আদালত।
মামলায় মো. রুবেল অভিযোগ করেন, গত বছরের ২৩ নভেম্বর আসামিরা তার ঘরে প্রবেশ করে জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। এতে দুই লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। দুদিন পর ২৫ নভেম্বর নগরের বাগদাদ হোটেলের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বায়েজীদ বোস্তামী থানা-পুলিশ। তবে তার বিরুদ্ধে কোনো পরোয়ানা ছিল না। এর আগে তিন লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল পুলিশ। সেই চাঁদা না দেওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা থেকে সবকিছু মুছে দেওয়া হয়।
মামলায় আরও বলা হয়, গাড়িতে তোলার পর মো. রুবেলের পকেটে থাকা ২৩ হাজার ৫০০ টাকা ও ফোন কেড়ে নেয় পুলিশ সদস্যরা। ওইদিন রাতে থানায় নিয়ে আসার পর আবার তাকে ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে ইয়াবা ও অস্ত্র মামলায় আদালতে পাঠায় পুলিশ। গত ১৫ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে মামলা করেন তিনি।
গাড়িতে তোলার পর মো. রুবেলের পকেটে থাকা ২৩ হাজার ৫০০ টাকা ও ফোন কেড়ে নেয় পুলিশ সদস্যরা। ওইদিন রাতে থানায় নিয়ে আসার পর আবার তাকে ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে ইয়াবা ও অস্ত্র মামলায় আদালতে পাঠায় পুলিশ।
জানতে চাইলে বায়েজীদ বোস্তামী থানার সাবেক ওসি বর্তমানে রংপুর রেঞ্জে কর্মরত মো. কামরুজ্জামান বলেন, রুবেল পুলিশের তালিকাভুক্ত একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় পাঁচটি মামলা রয়েছে। পুলিশ তার কাছে কোনো চাঁদা দাবি করেনি।
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু আইন পরিপালন নিশ্চিত করা আর অপরাধ প্রতিরোধ বা দমনই নয়, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বলা হয়। এই বিভাগ যেকোনো দেশ ও জাতির একটি স্থায়ী সম্পদ। তারা আইন ও নীতি-নৈতিকতার ব্যাপারে উচ্চতর স্থানে থাকার কথা। অথচ সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে পুলিশের কিছু সদস্য বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এ প্রবণতা এতই বাড়ছে যে, সহকর্মীরাও যৌন হয়রানি, ধর্ষণ থেকে ছাড় পাচ্ছে না। কেউ কেউ হত্যা, ধর্ষণ ও ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে চাঁদাবাজি ও মাদকের সাথে সম্পৃক্ত থাকা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধী যেই হোক, অপতৎপরতা-অনৈতিক থেকে পুলিশ বিভাগকে মুক্ত করার জন্য শক্তিশালী জবাবদিহির ব্যবস্থা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়াও যুগোপযোগী আইনেরও প্রয়োজন। প্রয়োজন আইনের সংস্কার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা যদি অনৈতিক কাজ করে আর শাস্তি যদি ১০০ টাকা হয় অপরাধ দমন তো হবেই না, বরং উৎসাহিত হবে। আর অপরাধ দমনের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে যারা নিজেরাই অপরাধে লিপ্ত হয়, তাদের শাস্তি অধিকতর কঠোর হওয়া দরকার।
তারা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছে দীর্ঘ দিন থেকে। অথচ ঘুষ, অনৈতিক, দুর্নীতির কারণে অভিযুক্ত এই বাহিনী তার পেশাদারিত্ব হারাচ্ছে। জনগণের প্রতি তার দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে জনগণের গর্বের বাহিনীতে পরিণত করতে হবে ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩৮
আপনার মতামত জানানঃ