রাতে বাড়ির উঠানে বা সামনেই বিশাল খোলা মাঠে বসে গল্প করছেন। হঠাৎ দেখলেন দূর আকাশ থেকে চোখধাঁধানো আলো ছড়িয়ে নেমে আসছে উড়ন্ত কোনো যান বা ইউএফও (অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু)। খুব কাছে এসে আবার হাওয়ায় মিলিয়ে গেল সেটি। এ ঘটনা দেখে তো চোখ ছানাবড়া। এটি কোনো কল্পকাহিনি নয়। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। আর এসব ঘটনা দিনে দিনে মানুষের মনে ভিনগ্রহবাসী নিয়ে প্রশ্ন আরও জোরালো করেছে।
ভিন্গ্রহের প্রাণী আছে না নেই, এ নিয়ে তর্ক বিতর্কের শেষ নেই। ভিন্গ্রহীদের নিয়ে নানা ছবিও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আদতে এর অস্তিত্ব আছে কি না তা নিয়ে বিস্তর সংশয় রয়েছে। তবে মাঝেমধ্যেই খবর শোনা যায়, আকাশে ভেসে বেড়াতে দেখা গিয়েছে অদ্ভুত যান। যেগুলিকে ভিন্গ্রহীদের যান বা ইউএফও বলে দাবি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বলছে, মার্কিন সামরিক বাহিনী আকাশে বিভিন্ন সময় কয়েক ডজন ইউএফওর দেখা পেয়েছেন, যদিও সেগুলোর কোনো ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত দাঁড় করানো যায়নি।
বেশ কিছু ইউএফওর ভিডিও ধারণ করার বিষয়ে পেন্টাগন স্বীকার করে নিলেও আমেরিকার নৌবাহিনী বলছে, তারা আর নতুন কোনো ইউএফও ভিডিও প্রকাশ করতে চায় না।
ভাইসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নৌবাহিনী এই ধরণের ভিডিও প্রকাশ করা ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে মনে করে।
আমেরিকার সরকারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সাইট দ্য ব্ল্যাকভল্টকে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী বলেছে, ইউএফওর ভিডিও জনগনের কাছে প্রকাশ হলে তা জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি সৃষ্টি করবে। কারণ এটি আমেরিকার প্রতিপক্ষকে প্রতিরক্ষা বিভাগ/নৌবাহিনীর অপারেশন, দুর্বলতা এবং এ সংক্রান্ত মূল্যবান তথ্য প্রদান করতে পারে।
এর আগে ব্ল্যাকভল্টের পক্ষ থেকে নৌবাহিনীর কাছে থাকা সমস্ত ইউএফওর ভিডিও চাওয়া হয়েছিল।
প্রায় ৩টি ভিডিও এর আগে প্রকাশ পেয়েছে, এই ভিডিওগুলো যে নৌবাহিনীরই ধারণ করা, তা নিশ্চিত করে পেন্টাগন। তবে ভিডিওগুলো সরকারি উপায়ে প্রকাশ করা হয়নি। এগুলো নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে ফাঁস করা হয়েছিল।
আমেরিকার নৌবাহিনীও স্বীকার করে নিয়েছে যে তাদের কাছে আরও ভিডিও রয়েছে।
পেন্টাগনও ইউএফও ইস্যুতে ইদানিং বেশ কথা বলছে। এই বছরের শুরুতে ইউএফও’র বিষয়ে কংগ্রেসের মুখোমুখিও হয়েছিল।
সামরিক বাহিনী আপাত দৃষ্টিতে জনসাধারণ ও কংগ্রেসকে বলতে চেয়েছে যে ইউএফওগুলো খুবই বাস্তব এবং একটি হুমকি। এ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের তহবিল প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়াদি জড়িত থাকার কারণে নতুন কোনো ভিডিও প্রকাশ করতে চায় না তারা।
এদিকে মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের হাউস ইন্টেলিজেন্স কাউন্টার টেররিজম, কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স এবং কাউন্টার প্রলিফারেশনের সাবকমিটির শুনানির সময় পেন্টাগনের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা রোনাল্ড মল্টলি বলেছেন, জোরালো বিশ্লেষণের মাধ্যমে কিছু ইউএপি শনাক্ত করা যেতে পারে, তবে সব ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়।
ইউএফওর ভিডিও জনগনের কাছে প্রকাশ হলে তা জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি সৃষ্টি করবে। কারণ এটি আমেরিকার প্রতিপক্ষকে প্রতিরক্ষা বিভাগ/নৌবাহিনীর অপারেশন, দুর্বলতা এবং এ সংক্রান্ত মূল্যবান তথ্য প্রদান করতে পারে।
২০০৪ সালে এমন এক ঘটনায় প্রশান্ত মহাসাগরে একটি বিমানবাহী রণতরি থেকে চালিত যুদ্ধবিমানের পাইলটরা এমন এক বস্তুর সম্মুখীন হন, যা থামা ও ঘোরাঘুরির আগের মুহূর্তেই কয়েক হাজার ফুট নিচে নেমে আসে।
অন্য একটি ঘটনায় প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে দেখানো হয়েছে, ক্যামেরায় একটি বস্তুকে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর যুদ্ধবিমানের পাশ দিয়ে উড়তে দেখা গেছে। যেটিকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের নৌ গোয়েন্দা বিভগের ডেপুটি ডিরেক্টর স্কট ব্রে বলেন, ‘কিছু কিছু ঘটনা আছে যেখানে আমরা ফ্লাইট থেকে প্রাপ্ত ডাটা দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারি না। তারাই আমাদের কাছে সবচেয়ে আগ্রহের বিষয়।’
তবে ইউএপিগুলো ভিনগ্রহী এলিয়েন হতে পারে, এমন ধারণাকে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন স্কট ব্রে। তার মতে, এগুলো জৈব বা অজৈব উপাদান বা ব্যাখ্যাতীত ধ্বংসাবশেষ, যা কখনো উদ্ধার করা হয়নি এবং এই বস্তুগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করা হয়নি।
শুনানিতে আইন প্রণেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যেকোনো ব্যাখ্যাতীত এরিয়াল ফেনোমেনা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।
আরকানসাস রিপাবলিকানের আইনপ্রণেতা রিক ক্রফোর্ডের মতে, এটি এলিয়েন মহাকাশযান খোঁজার বিষয় নয়, বরঞ্চ সম্ভাব্য হুমকি শনাক্তে অক্ষমতা গোয়েন্দা ব্যর্থতার সমতুল্য, যা আমরা এড়াতে চাই। তবে গণশুনানির পর আইন প্রণেতাদের জন্য প্রাইভেট ক্লাসিফায়েড সেশনের জন্য দরজা বন্ধ করা হয়।
ভিনগ্রহবাসী নিয়ে প্রশ্ন, কৌতূহল সম্ভবত সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির আকাশে গত ১৭ বছরে ১৪৪টি ইউএফও দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে একটি ছাড়া বাকি কোনোটিরই কোনো ব্যাখ্যা হাজির করতে পারেননি দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী, গবেষকসহ বিশেষজ্ঞরা। কাজেই ইউএফও, ভিনগ্রহবাসী নিয়ে ধাঁধা রয়েই গেছে।
এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইউএফও নিয়ে ১৪৪টি ঘটনা তারা জানতে পেরেছে। এর মধ্যে একটি ছাড়া বাকি ঘটনাগুলোর কোনো ব্যাখ্যা তারা পাননি। প্রতিবেদনে উড়োযানগুলো ভিনগ্রহ থেকে এসেছে—এমন সম্ভাবনাও বাতিল করে দেওয়া হয়নি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬২৫
আপনার মতামত জানানঃ