আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানে নতুন করে সংঘাত শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার আর্মেনিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই সংঘাতে তাদের কমপক্ষে ৪৯ সেনা নিহত হয়েছে। আজারবাইজানের সীমান্তের কাছে বেশ কিছু শহরে কামান দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। খবর রয়টার্স, আল-জাজিরা
আর্মেনিয়া বলছে, মঙ্গলবার সকালে জেরমুক, গোরিস, কাপানসহ বেশ কিছু শহরে হামলা চালানো হয়েছে। আজারবাইজানের এই হামলাকে ‘বড় ধরনের উস্কানি’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এর পাল্টা জবাব দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছে আর্মেনিয়া।
আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে আর্মেনিয়ান সেনাবাহিনী তাদের সীমান্ত এলাকা দাশকেসান, কালবাজার এবং লাচিনে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
আজারবাইজানি কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, আর্মেনিয়ান সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য নাশকতার উদ্দেশ্যে আজারবাইজানি সেনাবাহিনীর অবস্থানস্থলের বিভিন্ন জায়গা ও রাস্তায় মাইন বিছিয়েছিল। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আজারবাইজানি সেনাদের নেওয়া পাল্টা ব্যবস্থার ফলস্বরূপ এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় উভয় পক্ষের সেনারা হতাহত হয়।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে আর্মেনিয়ান প্রশাসন সংঘাতের জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী।
এদিকে আর্মেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজারবাইজান-আর্মেনিয়া সীমান্তে সর্বশেষ সংঘর্ষের বিষয়ে আর্মেনিয়ান প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান মঙ্গলবার ভোরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে পৃথকভাবে ফোনালাপ করেছেন।
ওই ফোনালাপের সময় ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন যে এ ধরনের সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি অগ্রহণযোগ্য। এখন পরিস্থিতি শান্ত করা দরকার।
অপরদিকে আর্মেনিয়ান গণমাধ্যম জানিয়েছে, পাশিনিয়ান বিষয়টি সমাধানের জন্য আর্মেনিয়ান নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠক ডেকেছেন।
এ বিষয়ে সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সীমান্তে সংঘর্ষের খবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ সময় তিনি অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধের বিষয়ে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা অনেক আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছি যে এ সংঘাতের কোনো সামরিক সমাধান হবে না।
কিছুদিন আগেও নাগারনো-কারাবাখ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে সংঘাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। সে সময় সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত তিনজন নিহত হয়। আহত হয় আরও
বেশ কয়েকজন। উভয়পক্ষই একে ওপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে।
কিছুদিন আগেও নাগারনো-কারাবাখ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে সংঘাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। সে সময় সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত তিনজন নিহত হয়। আহত হয় আরও
বেশ কয়েকজন। উভয়পক্ষই একে ওপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে।
আজারবাইজান তখন অভিযোগ তোলে যে, আর্মেনিয়ার মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতবাদী কারাবাখ যোদ্ধারা ওই অঞ্চলে আজারি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। তারপরেই আজারবাইজান বাধ্য হয়ে ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান চালায়।
বিপরীতে আর্মেনিয়ার অভিযোগ ছিল, বিতর্কিত এলাকায় আজারবাইজানই প্রথম অভিযান চালিয়েছে। রুশ শান্তিরক্ষী বাহিনীর টহলদারী এলাকায় আজারবাইজানের সেনারা ঢুকে পড়লে তাদের বাধা দেওয়া হয়।
নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলটি আজারবাইজানের মধ্যে অবস্থিত হলেও ১৯৯৪ সালে যুদ্ধের পর থেকে সেটি জাতিগত আর্মেনীয়দের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ২০২০ সালের যুদ্ধে অঞ্চলটি ফের দখলে নেয় আজারি সৈন্যরা। ছয় সপ্তাহের ওই যুদ্ধে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। পরে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় দুই পক্ষের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক নাগোরনো-কারাবাখে রাশিয়ার দুই হাজার শান্তিরক্ষী মোতায়েন রয়েছে।
প্রতিবেশী দেশগুলো যা বলছে
আজারবাইজানের ঘনিষ্ঠ মিত্র তুরস্ক বলছে, আর্মেনিয়ার উচিত ‘উস্কানি বন্ধ করা ‘।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেছেন যে, তিনি আজারবাইজানের সঙ্গে সীমান্তে ‘আর্মেনিয়ান উস্কানি’ নিয়ে তার আজারি প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। শান্তি আলোচনায় মনোযোগ দেওয়ার জন্য ইয়েরেভানকে আহ্বান জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জেহুন বায়রামভের সঙ্গে আলোচনার পর মেভলুত কাভুসোগলু টুইটারে বলেছেন, ‘আর্মেনিয়ার উচিত তার উস্কানি বন্ধ করা এবং আজারবাইজানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ও সহযোগিতার দিকে মনোনিবেশ করা। ’
এদিকে ফ্রান্স জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়টি উত্থাপন করবে বলে জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কার্যালয় বলেছে, তিনি উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার জন্য অনুরোধ অব্যাহত রেখেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার পাশাপাশি, ফ্রান্স মিনস্ক গ্রুপের সহ-সভাপতি, যা বাকু এবং ইয়েরেভানের মধ্যে মধ্যস্থতা করে।
রাশিয়া আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানকে শত্রুতা বন্ধ করার এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি পালন করার আহ্বান জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা মঙ্গলবার মস্কো সময় ৯টায় (জিএমটি ৬টা) যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করেছে এবং উভয় পক্ষই চুক্তির শর্ত পূরণ করবে বলে আশা করছে।
তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৫ মিনিটের মধ্যে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। তবে হামলার তীব্রতা কমে এসেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭০৫
আপনার মতামত জানানঃ