ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এক টেলিভিশন ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে এক ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করার ঘোষণা দেন।
ইউক্রেনে রুশ অভিযানকে কেন্দ্র করে মস্কোর উপর বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে নানা রকমের পণ্য রপ্তানি করছে মস্কো এবং তা থেকে শত শত ডলার আয় হচ্ছে। তবে এসব পণ্যের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।
ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত রাশিয়ার জ্বালানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করে এসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
তবে যেসব রাশিয়ার পণ্য নিষেধাজ্ঞার বাইরে রয়েছে তা আমদানি করছে দেশটি, যার মূল্য কয়েকশ কোটি ডলার। এপির বরাত দিয়ে রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটি এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে থেকে রাশিয়ার কাঠ, ধাতু ও রাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের ৩ হাজার ৬০০ চালান যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে পৌঁছায়। তবে ২০২১ সালে একই সময়ে রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ছয় হাজার চালান পাঠানো হয়েছিল।
সে হিসেবে রাশিয়া থেকে আমদানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এখনো প্রতিমাসে একশ কোটি ডলারের বেশি রাশিয়ান পণ্য আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার যেসব পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তাতে রাশিয়ার যতটা ক্ষতি হচ্ছে তার চেয়ে সম্ভবত বেশি ক্ষতি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু আমদানিকারক হয়তো এ সব পণ্যের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে পেরেছেন, তবে অনেকেই তা পারেননি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাশিয়ার রপ্তানি করা পণ্যগুলো বৈধ ও বাইডেন প্রশাসনের আগ্রহ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে রাশিয়ান বন্দর থেকে পাঠানো পণ্যের উৎস নির্ণয় করা কঠিন হতে পারে।
যেমন মার্কিন জ্বালানি সংস্থাগুলো রাশিয়ান বন্দরগুলোর মাধ্যমে কাজাখস্তান থেকে তেল আমদানি চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও সেই তেল কখনো কখনো নিষিদ্ধ রাশিয়ান জ্বালানির সঙ্গে মিশ্রিত হয়।
রাশিয়া অ্যালুমিনিয়াম, ইস্পাত ও টাইটানিয়ামের মতো ধাতুগুলোর প্রধান রপ্তানিকারক। মরগান স্ট্যানলির অর্থনীতিবিদ জ্যাকব নেল বলেছেন, এই বাণিজ্য বন্ধ করায় যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে গেছে।
এদিকে, মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরু করে। রাশিয়ার এই অভিযানের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর বিরুদ্ধে হাজার হাজার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
এরপরও ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া অন্তত ৩,৬০০টি পণ্যের চালান পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে কাঠ, ধাতব পদার্থ, রাবার এবং অন্যান্য জিনিস।
অবশ্য গত বছরের একই সময়ে রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৬,০০০ চালান পাঠানো হয়েছিল। সে হিসাবে এবার মার্কিন বন্দরগুলোতে রাশিয়ার পণ্যের চালান অনেক কমেছে কিন্তু তারপরেও প্রতিমাসে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠিয়ে ১০০ কোটিরও বেশি ডলার আয় করছে।
রাশিয়া থেকে প্রায় প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে জাহাজ ভিড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার যে সমস্ত পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তাতে রাশিয়ার যতটা ক্ষতি হচ্ছে তার চেয়ে সম্ভবত বেশি ক্ষতি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো আমদানিকারক হয়তো এ সমস্ত পণ্যের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে পেরেছেন, তবে অনেকেই তা পারেননি।
উল্লেখ্য, ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে কয়েক শ ‘বিলাসী পণ্যের’ একটি দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। তালিকায় প্রসাধনী থেকে শুরু করে অলংকার, সিরামিক পণ্য, গাড়ির যন্ত্রাংশ, ভদকাসহ বহু পণ্য রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসব পণ্য রাশিয়ায় রপ্তানি করা নিষিদ্ধ থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শিল্প ও নিরাপত্তা ব্যুরো এ বিধিনিষেধ প্রকাশ করে বলেছে, ১৬ মার্চ থেকে এটি কার্যকর হবে। প্রকাশিত তালিকায় প্রায় ৫৭০ ধরনের পণ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে বিয়ার, ওয়াইন, হুইস্কি, ভদকাসহ বিভিন্ন পানীয়, তামাকজাত পণ্য, পারফিউমসহ বিভিন্ন প্রসাধনী, খেলাধুলার সরঞ্জাম, চামড়াজাত বিভিন্ন পণ্য, গাড়ির সরঞ্জাম, তৈরি পোশাক, পশমের চামড়া, সিল্ক, কার্পেট, পিয়ানো, হীরা, প্রাচীন জিনিসপত্র ও বিলাসবহুল প্রমোদতরির প্রয়োজনীয় উপকরণ।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বিধিনিষেধের আওতায় থাকা এসব পণ্যের রপ্তানিমূল্য বার্ষিক প্রায় ৫৫ কোটি মার্কিন ডলার।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯৩২
আপনার মতামত জানানঃ