উদ্ধারের ১২ দিন পার হলেও এখনো ইউরোপের মাটিতে পা রাখার অনুমতি পাননি ৯৯ অভিবাসনপ্রত্যাশী। কে তাদের গ্রহণ করবে তা নিয়ে নিকটবর্তী তিন দেশের ঠেলাঠেলিতে আজও সাগরে ভাসছে এসব মানুষ। তারা দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ছে, অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। সৃষ্টি হয়েছে এক মানবেতর পরিস্থিতি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ১৭ আগস্ট স্প্যানিশ দাতব্য সংস্থা ওপেন আর্মস ১০১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে তিউনিসিয়া উপকূলে একটি কাঠের নৌকা থেকে উদ্ধার করে। যাদের মধ্যে অধিকাংশই মিসরীয়। নৌকাটি অন্তত ১৬ আগস্ট থেকে পানিতে ভাসছিল। এত দিন ধরে নৌকায় থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে।
অসুস্থ একজনের জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হওয়ায় তাকে এবং তার সঙ্গীকে ইতালিতে নামার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে বাকিদের ওপেন আর্মসের উদ্ধারকারী জাহাজেই থাকতে বলা হয়। এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে পার্শ্ববর্তী ইতালি, মাল্টা অথবা স্পেনে নামানোর অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
ওপেন আর্মস ইউনোর মিশন প্রধান ডেভিড লাডো জানান, মাল্টা অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং স্প্যানিশ পতাকাবাহী জাহাজটিকে স্প্যানিশ রাষ্ট্রীয় চ্যানেলের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে বলেছে ইতালি। সংস্থাটি এরপর স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা প্রোটোকল সক্রিয় করতে অনুরোধ জানিয়েছে।
এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইতালি সরকার। বন্দর ও কোস্টগার্ডের দায়িত্বে থাকা স্পেনের পরিবহন মন্ত্রণালয় বলেছে, স্প্যানিশ বন্দরে জাহাজ ভেড়ার জন্য ওপেন আর্মস থেকে কোনো অনুরোধ পায়নি তারা।
এদিকে ইতালীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, একটি এনজিওর নৌকাসহ চারটি ভিন্ন নৌকায় বুধবার (২৫ আগস্ট) প্রায় ১ হাজার ২০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী ইতালিতে পৌঁছেছেন। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে স্পেনে প্রবেশকারী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
জাহাজে থাকা রাসেল মিয়া নামে ১৯ বছর বয়সী এক অভিবাসনপ্রত্যাশী বলেন, দয়া করে কিছু করুন। আমরা আহত, দুর্বল। আমরা অসুস্থ।
দয়া করে কিছু করুন। আমরা আহত, দুর্বল। আমরা অসুস্থ।
ইতালীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, একটি এনজিওর নৌকাসহ চারটি ভিন্ন নৌকায় গত বুধবার (২৫ আগস্ট) প্রায় ১ হাজার ২০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী ইতালি পৌঁছেছেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইতালি সম্প্রতি পৌঁছানো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে কাজ করছে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে।
ইউক্রেন সংঘাতের কারণে সৃষ্ট খাদ্য ঘাটতিতে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে নতুন করে ইউরোপমুখী অভিবাসীদের ঢলের হুমকি দেখা দিয়েছে। চলতি বছর ইউরোপযাত্রার অন্যতম সমুদ্রপথ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে দেড় লাখের বেশি অভিবাসী পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হয় দালালের হাত ধরে ইতালি ও স্পেন প্রবেশের চেষ্টায় ভূমধ্যসাগরে ডুবে শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু। খবর আসে, আমেরিকায় যাওয়ার পথে বনে-জঙ্গলে দালালের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। ইউরোপে ঢোকার আশায় বলকানের বরফঢাকা জঙ্গলে হাজারো মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে অপেক্ষায় থাকার সংবাদও আসে।
ভালো পারিশ্রমিকের আশায় কয়েক বছর ধরে পাচারকারীদের সহায়তায় লিবিয়া যাচ্ছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। সেখান থেকেই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। এরপরও ঝুঁকিপূর্ণ এ প্রবণতা বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া প্রতারণার শিকার হয়ে লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের হাতে বহু অভিবাসনপ্রত্যাশী আছেন আটক অবস্থায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৪০
আপনার মতামত জানানঃ