আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।সন্ধ্যার নামাজের সময় এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন আরও অনেকে। আহতদের মধ্যে পাঁচটি শিশুও রয়েছে।
দেশটির পুলিশ ও হাসপাতাল বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি
প্রতিবেদনে বলা হয়, তালিবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ নিশ্চিত করেছেন হতাহতের ঘটনা। তবে কতজন হতাহত হয়েছেন তা তিনি নিশ্চিত করেননি। টুইটারে তিনি লিখেছেন, সাধারণ মানুষ ও মুসল্লিদের হত্যাকারীদের শিগগির শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা আল-জাজিরাকে বলেন, বিস্ফোরণে ২০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৪০ জন। তবে এএফপিসহ একাধিক সংবাদমাধ্যম নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ১০ বলে জানিয়েছে।
কাবুলের রাজধানীতে একটি হাসপাতাল পরিচালনা করে থাকে ইতালীয় বেসরকারি সংস্থা ইমার্জেন্সি। সংস্থাটি জানিয়েছে, আহত ২৭ জনকে তারা চিকিৎসা দিয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন শিশু।
সংবাদ সংস্থাগুলোকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উত্তর কাবুলের উপকণ্ঠে খায়ের খান্নায় সিদ্দিকিয়া মসজিদে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশের বাসাবাড়ির জানালার কাচ ভেঙে যায়।
উত্তর কাবুলের উপকণ্ঠে খায়ের খান্নায় সিদ্দিকিয়া মসজিদে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশের বাসাবাড়ির জানালার কাচ ভেঙে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মসজিদের ইমাম মোল্লা আমির মোহাম্মদ কাবুলিও রয়েছেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশে নিরাপত্তা ফেরানোর দাবি করে আসছে তালিবান। কিন্তু এর মধ্যেই প্রায়ই হামলা চালাচ্ছে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চালানো অধিকাংশ হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের অনুসারী ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশ (আইএসকেপি/আইএসআইএস-কে)। গত সপ্তাহে কাবুলের একটি মাদ্রাসায় চালানো বোমা হামলায় তালিবানের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা শেখ রহিমুল্লাহ হাক্কানি নিহত হন বলে জানান তালিবান কর্মকর্তারা। ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট।
গত বছর তালিবানের ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছে শিয়া জনগোষ্ঠীর মানুষ। পাশাপাশি হাজারা, তাজিক, উজবেকসহ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপরও ক্রমাগত হামলার ঘটনা ঘটছে।
বর্তমানে হাজারাদের নতুন শত্রু আইএস। পথে, বাসে, প্রতিষ্ঠানে যেখানে সুযোগ পাচ্ছে, সেখানে হামলা চালাচ্ছে তারা। চারদিক থেকে নির্যাতনের শিকার হাজারা সম্প্রদায়ের লোকজন প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তারা আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত জঙ্গিপ্রবণ আফগানিস্তানে হাজারারা নিষ্পেষিত— এ কথা প্রমাণ দিয়ে বলা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে এমন আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে যে, আফগানিস্তানে আসলে কারা সুরক্ষিত? কেউ নয়। জোর দিয়ে বলা যায়, যত দিন ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষ হত্যা বন্ধ না হবে, ততদিন শান্তি ফিরবে না আফগান মুল্লুকে। আর ততদিন শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না হাজারারা। ফলে শান্তির জন্য আফগানিস্তানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বহু বিভক্ত আফগানিস্তানে সেই সম্প্রীতি কবে হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৫৯
আপনার মতামত জানানঃ