ইউক্রেনে রুশ সামরিক আগ্রাসনের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। এরই মধ্যে গত রবিবার রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছে রাশিয়া। এক শীর্ষ রুশ কর্মকর্তা বলেছেন, মস্কো ওয়াশিংটনকে সতর্ক করেছে যে, মার্কিন সিনেট যদি রাশিয়াকে ‘সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক’ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে আইন পাস করে তবে দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনকি সম্পর্ক ছিন্নও হতে পারে। তিনি বলেন, সরাসরি যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ।
এদিকে বিশ্বের পারমাণবিক বোমা ও সামরিক শক্তিতে ক্ষমতাধর শীর্ষ এই দুই দেশের কথার লড়াইয়ে পারমাণবিক যুদ্ধেরও আভাস দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ বাঁধলে বিশ্বের ৫০০ কোটিরও বেশি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে বলে জানিয়েছে এক সমীক্ষা।
সোমবার (১৫ আগস্ট) প্রকাশিত নেচার ফুড জার্নালের একটি সমীক্ষায় এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, দুই দেশের পারমাণবিক যুদ্ধের পর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ছাইয়ে ঢেকে যাবে। ফলে সূর্যালোক পৃথিবীতে আসতে পারবে না। বিপর্যয় ও খাদ্যাভাব নেমে আসবে পৃথিবীতে।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করবে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রুডগার্স ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলছেন, সত্যিকার বিপর্যয় হবে সংঘাতের পরের বছরগুলোতে। তখন বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে এবং খাদ্যশস্যের ওপর নিউক্লিয়ার উইন্টারের প্রভাব পড়বে।
আকাশে ধোঁয়া ও ছাইয়ের মেঘের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশে খাদ্য সরবরাহ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে। এ খাদ্যসংকট এতই ভয়াবহ হবে যে এর ফলে ৫০০ কোটির বেশি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।
এই নিউক্লিয়ার উইন্টার তখনই আসবে যখন পারমাণবিক সংঘাতের ফলে সৃষ্ট ছাই বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে এবং পরের ১-২ বছর সূর্যালোক প্রবেশে বাধা দেবে। ফলে মানুষের যেই প্রধান খাদ্য উপাদানগুলো রয়েছে তার মধ্যে চাল, গম, ভুট্টা, সয়াবিন ছাড়াও মাছ উৎপাদন ব্যাহত হবে। বিশ্বব্যাপী দেখা দেবে খাদ্যসংকট।
তবে নিউক্লিয়ার উইন্টার পুরো পৃথিবীতেই একসঙ্গে হবে না। এটি নির্ভর করবে বায়ুর গতির ওপর।
গবেষকরা এ ক্ষেত্রে জলবায়ুর মডেল ব্যবহার করে দেখেছেন, আকাশে ধোঁয়া ও ছাইয়ের মেঘের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশে খাদ্য সরবরাহ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে। এ খাদ্যসংকট এতই ভয়াবহ হবে যে এর ফলে ৫০০ কোটির বেশি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।
রাশিয়া ও আমেরিকা দুই দেশই বিশ্বের প্রধান খাদ্য রপ্তানিকারক দেশ। তো এই দুই দেশেই পারমাণবিক যুদ্ধ লাগলে খাদ্য আমদানিনির্ভর দেশগুলোর ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধে এর কিছুটা আঁচ পাওয়া গেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়ার সৈন্যরা। রুশ-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মাঝে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় এই গবেষণা চালিয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। চলতি বছরের এপ্রিলে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, পারমাণবিক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে।
জলবায়ু বিজ্ঞানের অধ্যাপক ও গবেষণাপত্রের সহলেখক অ্যালান রোবক বলছেন, ‘তথ্যগুলো আমাদের একটি জিনিসই বলে, আমাদের অবশ্যই একটি পারমাণবিক যুদ্ধকে ঘটতে বাধা দিতে হবে।’
এর আগে ১৮১৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট তামবোরা এবং ১৭৮৩ সালে আইসল্যান্ডের লাকির মতো বড় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পরে বায়ুমণ্ডলে ছাই প্রবেশে জলবায়ুতে মারাত্মক পরিবর্তন আসে। যার ফলে দুর্ভিক্ষ এবং রাজনৈতিক উত্থান ঘটেছিল।
প্রকৃতপক্ষে, এ জলবায়ু বিজ্ঞানী উদ্বিগ্ন যে, বায়ুমণ্ডলকে বিষাক্ত কণা দিয়ে ভরাট করলে অপ্রত্যাশিত ফলাফল হতে পারে এবং এটি পৃথিবীকে আরও জলবায়ু সংক্রান্ত অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪৫
আপনার মতামত জানানঃ