বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু আইন পরিপালন নিশ্চিত করা আর অপরাধ প্রতিরোধ বা দমনই নয়, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বলা হয়। এই বিভাগ যেকোনো দেশ ও জাতির একটি স্থায়ী সম্পদ। তারা আইন ও নীতি-নৈতিকতার ব্যাপারে উচ্চতর স্থানে থাকার কথা। অথচ সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে পুলিশের কিছু সদস্য বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরের গাবতলীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে এক স্বর্ণের দোকানের কর্মচারীর ৩৮ ভরি স্বর্ণ, একটি মোবাইল ও দোকানের গুরুত্বপূর্ণ কাগজ লুট করেছে দুর্বৃত্তরা।
রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দারুস সালাম থানাধীন গাবতলী বাস টার্মিনালের বসুমতি বাস কাউন্টারের সামনে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার রূপনগর থানার এএসআই জাহিদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে স্বর্ণালংকার ছিনতাইয়ে গ্রেপ্তার রূপনগর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহিদুল ইসলামকে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) তোফাজ্জল হোসেন আজ মঙ্গলবার তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দারুস সালাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বায়েজীদ মোল্লা বলেন, স্বর্ণালংকার ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার রূপনগর থানা এলাকা থেকে এএসআই জাহিদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চাইলে বিচারক চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
টিটু প্রধানীয় নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্য পরিচয়ে ৩৮ ভরি ১৪ আনা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গতকাল সোমবার দারুস সালাম থানায় একটি মামলা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রাজধানীর তাঁতীবাজার এলাকার একটি স্বর্ণালংকারের দোকানে চাকরি করেন টিটু প্রধানীয়। তিনি গতকাল একটি ব্যাগে স্বর্ণালংকার নিয়ে যাচ্ছিলেন। এগুলো টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও সখীপুরের বিভিন্ন সোনার দোকানে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। তিনি গাবতলীতে পৌঁছে বাসের অপেক্ষা করছিলেন। তখন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ডিবি পরিচয় দিয়ে তার নাম, ঠিকানা ও পেশা জানতে চান। টিটু এসময় নিজের পরিচয় দেন এবং ২৬ লাখ টাকার ৩৮ ভরি ১৪ আনা স্বর্ণালংকার কথা জানান। তখন ওই ব্যক্তি স্বর্ণালংকারের কাগজ দেখতে চান। টিটু যখন ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন সেখানে ৪-৫ হাজির হন এবং স্বর্ণালংকারের ব্যাগ ছিনিয়ে নেন।
এজেহারে আরও বলা হয়, এরপর টিটুকে তেজগাঁও থানায় নেওয়ার কথা বলে একটি মোটরসাইকেলে ওঠানো হয় এবং বেড়িবাঁধ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে বিজয় সরণি এলাকায় এসে তারা নেমে যান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বায়েজীদ মোল্লা বলেন, টিটু প্রধানীয় মোটরসাইকেলের নম্বর টুকে রেখেছিলেন। ওই মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করেন এএসআই জাহিদুল ইসলাম। তার হেফাজত থেকে মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়েছে। এটি তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল বলে দাবি করেছেন। তবে বিআরটিএ থেকে মোটরসাইকেলের মালিকানার বিষয়টি এখনো যাচাই করা হয়নি।
ছিনতাই হওয়া স্বর্ণালংকার উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ অন্যায় অনৈতিক কাজের কারণেই সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তারা বলেন, অপরাধী যেই হোক, অপতৎপরতা-অনৈতিক থেকে পুলিশ বিভাগকে মুক্ত করার জন্য শক্তিশালী জবাবদিহির ব্যবস্থা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়াও যুগোপযোগী আইনেরও প্রয়োজন। প্রয়োজন আইনের সংস্কার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা যদি অনৈতিক কাজ করে আর শাস্তি যদি ১০০ টাকা হয় অপরাধ দমন তো হবেই না, বরং উৎসাহিত হবে। আর অপরাধ দমনের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে যারা নিজেরাই অপরাধে লিপ্ত হয়, তাদের শাস্তি অধিকতর কঠোর হওয়া দরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১২০
আপনার মতামত জানানঃ