করোনা ভাইরাস, মাঙ্কিপক্সের পর এবার নতুন আতঙ্ক মারবার্গ ভাইরাস। ঘানায় মারবার্গ ভাইরাসের আক্রমণে ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুঁশিয়ারি, সাবধান না হলে খুব সহজেই হাতের বাইরে চলে যাবে এই ভাইরাস। এক্ষেত্রে মৃত্যু হার ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
পশ্চিম আফ্রিকার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি ইবোলার মতো একটি অত্যন্ত সংক্রামক রোগ। চলতি মাসের শুরুতে ভাইরাসে আক্রান্ত দুই ব্যক্তি মারা গেছেন।
মারবার্গ বাদুড় থেকে মানুষে সংক্রামিত হয়। এর এখনও কোনো চিকিৎসা নেই। তবে বেশি বেশি পানি পানের পাশাপাশি মৃদু উপসর্গের চিকিৎসা করলে বেঁচে থাকার হার বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, ঘানায় ১০ জুলাই প্রথম শনাক্ত হয় এ ভাইরাস। সেনেগালের একটি ল্যাবে ফলাফলগুলো যাচাই করা হয়েছিল।
ঘানা হেলথ সার্ভিস (জিএইচএস) রোববার বিবৃতিতে জানিয়েছে, সেনেগালের ডাকারের ইনস্টিটিউট পাস্তুরে পরীক্ষার ফলগুলোকে যাচাইয়ের পর তারা এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।
‘ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি কমাতে কাজ করছে জিএইচএস। শনাক্ত ব্যক্তিরা যাদের কাছাকাছি গিয়েছিলেন, তাদের চিহ্নিত করে আলাদা থাকতে বলা হয়েছে।’
ঘানায় গত ২৬ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন এক ব্যক্তি। পরদিনই তিনি মারা যান। অন্যদিকে, ২৮ জুন ভর্তি হয়ে ওই দিনই মারা যান দ্বিতীয় এক ব্যক্তি। ওই দুই ব্যক্তির শরীরের প্রাথমিকভাবে মারবার্গ ভাইরাস পাওয়া গেলেও নমুনা পাঠানো হয় সেনেগালে। পরে সেখানেও ওই নুমনা পজিটিভ হয়।
মারবার্গ ভাইরাস অত্যন্ত সংক্রমক হওয়ায় ওই ২ জনের মৃত্যুর পর তাদের সংস্পর্শে আসা ৯০ জনের উপরে নজর রাখা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দক্ষিণ ঘানার আশান্তি অঞ্চলের দুজন হাসপাতালে মারা গেছেন। তারা ডায়রিয়া, জ্বর, বমিসহ নানা উপসর্গে ভুগছিলেন।
ঘানার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু করেছে। আফ্রিকায় ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক মাতশিদিসো মোয়েতি বলেন, ‘এটি ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে মারবার্গ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’
পশ্চিম আফ্রিকায় মারবার্গের দ্বিতীয় প্রাদুর্ভাব এটি। এই অঞ্চলে ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয় গত বছর গিনিতে। এরপর আর কেউ শনাক্ত হয়নি।
হু জানিয়েছে গত অগাস্টে পশ্চিম আফ্রিকার গিনিতে এক মারবার্গ রোগী ধরা পড়ে। এর ৫ সপ্তাহ পর এটিকে মহামারী বলে ঘোষণা করে গিনি সরকার। এর আগে আফ্রিকার অ্য়াঙ্গোলা, কঙ্গো, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকায় ও উগান্ডায় এই ভাইরাস ধরা পড়ে।
১৯৬৭ সাল থেকে বেশ কয়েক দফায় বড় আকারে মারবার্গের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে; বেশির ভাগই দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকায়।
ভাইরাসের স্ট্রেন এবং কেস ম্যানেজমেন্টের ওপর নির্ভর করে ডব্লিউএইচও বলছে, আক্রান্তে মৃত্যুর হার ২৪ থেকে ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
মারবার্গ বাদুড় থেকে মানুষে সংক্রামিত হয়। এর এখনও কোনো চিকিৎসা নেই। তবে বেশি বেশি পানি পানের পাশাপাশি মৃদু উপসর্গের চিকিৎসা করলে, বেঁচে থাকার হার বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মারবার্গ ভাইরাসের উপসর্গ
মানব শরীরে এই ভাইরাস ঢুকলে ২-২১ দিন ধরে চলে ইনকিউবেশন পিরিয়ড। এরপরই বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। সাধারণত এক্ষেত্রে ধুম জ্বর, মাথাধরা, মাথাঘোরা, বমিবমি ভাব, বুকে ব্যথা, গলায় ব্যথা, তলপটে ব্যথা, ডায়রিয়া হতে পারে।
উপসর্গ একটু পুরনো হলে জন্ডিস, প্যাংক্রিয়াস ফোলা, হঠাত্ করে ওজন কমে যাওয়া, লিভারের সমস্যা, মাল্টি অর্গান ফেইলিওর হতে পারে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬২৫
আপনার মতামত জানানঃ