ধুকছে বিশ্ব অর্থনীতি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর নাজেহাল অবস্থা। সেই প্রভাবে কাবু ভারতের অর্থনীতিও। এরইমধ্যে সোমবার এক ডলার কিনতে খরচ করতে হয়েছে ৮০ রুপি। এটি রুপির দাম পতনের নতুন মাইলফলক। এর আগে ডলারের বিপরীতে রুপির দাম কখনো ৮০ ছাড়ায়নি। খবর ব্লুমবার্গ।
খবরে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার এক ডলারের বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে ৮০.০৬ রুপি। এ নিয়ে চাপে রয়েছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার। ২০১৪ সালে ৬৩ রুপি দিয়ে কেনা যেতো এক ডলার। কিন্তু এখন খরচ করতে হচ্ছে ৮০ রুপি।
অর্থাৎ দাম পড়েছে ২৫ শতাংশ। সাম্প্রতিক দর পতনের কারণ হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ তুলে নেয়াকে দায়ী করা হচ্ছে।
মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার পতনের কারণ কী? প্রাথমিকভাবে দেশটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত, আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিতিশীল আর্থিক অবস্থা, অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতির কারণে ভারতীয় রুপির মানের রেকর্ড পতন হয়েছে।
সোমবার দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছিলেন, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত রুপির মানের ধারাবাহিক পতন হয়েছে। এই সময়ে মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে ভারতীয় মুদ্রার দর।
এ নিয়ে চাপে রয়েছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার। ২০১৪ সালে ৬৩ রুপি দিয়ে কেনা যেতো এক ডলার। কিন্তু এখন খরচ করতে হচ্ছে ৮০ রুপি।
তিনিও রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব, অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি এবং বিশ্বজুড়ে আর্থিক অবস্থার প্রভাবই ভারতীয় মুদ্রার পতনের প্রধান কারণ বলে লোকসভায় জানান দেশটির কেন্দ্রীয় এই অর্থমন্ত্রী।
সীতারামন বলেন, চলতি অর্থবছরে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ। এখন পর্যন্ত ভারতীয় ইকুইটি বাজার থেকে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার তুলে নিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এটি ভারতীয় মুদ্রার দর পতনের অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এ নিয়ে প্রায় ২৭ বারের মতো কমেছে ভারতীয় মুদ্রার মান। একদিকে ক্রমাগত ভারতীয় রুপির দাম কমছে। অন্যদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মার্কিন ডলারের দাম।
শুধু ভারত নয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বিশ্ব অর্থনীতির চেহারা বদলে দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক সংকটের কারণে প্রায় চার থেকে সাত শতাংশ পতন ঘটেছে মুদ্রার। আর তা প্রভাবিত করেছে সামগ্রিক অর্থবাজারকে।
বিশ্লেষকদের মতে, এ মুহূর্তে ডলারের সাপেক্ষে অন্যান্য মুদ্রার দামের পতনের বহুবিধ কারণ থাকলেও প্রধান কারণ দুটি। এক, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পেট্রোলিয়াম থেকে রকমারি পণ্য—সবকিছুরই দাম বেড়েছে। অর্থাৎ ডলারের অঙ্কে সেই পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আমদানির পরিমাণ অন্তত স্বল্প মেয়াদে কমানো অসম্ভব, ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। তাতে ডলার মূল্যবান হয়েছে, উল্টো দিকে স্থানীয় মুদ্রার দাম পড়েছে।
দ্বিতীয় কারণটি হলো, আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়িয়েছে। সারা পৃথিবীতে আর্থিক ক্ষেত্রে তুমুল অনিশ্চয়তা চলছে—এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা স্বাভাবিকভাবেই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করছেন। সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন ডলার সে দেশেই জমা রাখা লাভজনক, নিরাপদ। ফলে ভারতের মতো বাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার চল শুরু হয়েছে। অন্যান্য দেশ থেকেও বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। ফলে গোটা এশিয়াতেই স্থানীয় মুদ্রা এখন দুর্বল—চীনের ইউয়ান, জাপানের ইয়েন—সব কটিরই পতন ঘটছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫১২
আপনার মতামত জানানঃ