গত আগস্টে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়া তালিবান দাবি করেছিল, তারা পাল্টেছে অনেকটাই। নব্বইয়ের দশকের কট্টর অবস্থান থেকে বেশ উদার হবে এবার। তবে গোটা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ পোক্ত করার পর নারীদের নব্বইয়ের দশকের সেই শাসনের মতোই ঘরবন্দি করে ফেলেছে তারা।
আফগানিস্তানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারী কর্মীদের তালিবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কর্মক্ষেত্রে তাদের পুরুষ স্বজনদের পাঠাতে। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এমন একজন নারী জানিয়েছেন, তার কাছে তালিবান কর্মকর্তারা ফোন করেছেন। সে সময় তাকে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে তার পরিবর্তে কোনো পুরুষ স্বজনকে পাঠাতে।
তালিবান কর্মকর্তারা তাকে বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ বেড়েছে তাই তারা নারী কর্মীদের পরিবর্তে কোনো পুরুষ কর্মীকে নিয়োগ দিতে চান।
গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণ করে তালিবান। তারপর থেকে দেশটিতে নতুন নতুন বিধিনিষেধ জারি হচ্ছে। অর্থনীতি বিষয়ক দপ্তরের এক নারী বলেন, তালিবান যখন থেকে ক্ষমতায় এসেছে তখন থেকেই কর্মক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। তারা আমার বেতন কমিয়ে দিয়েছে।
আগে তিনি ৬০ হাজার আফগানি পেতেন (৫৭৫ পাউন্ড)। কিন্তু বর্তমানে তার বেতন মাত্র ১২ হাজার আফগানি। তিনি বলেন, আমি এখন আমার ছেলের স্কুলের বেতনও দিতে পারছি না। এ বিষয়ে এক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করায় তাকে অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়।
ওই নারী জানান, তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে এই পোস্টে কাজ করছেন। কিন্তু এখন তাকে বলা হচ্ছে এই পোস্টে অন্য কোনো পুরুষকে নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি ব্যবস্থাপণায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ের একটি দপ্তরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে এই পোস্টে কাজ করছেন। কিন্তু এখন তাকে বলা হচ্ছে এই পোস্টে অন্য কোনো পুরুষকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
এদিকে তালিবানের বিভিন্ন নীতিমালা নিয়ে বিশ্বজুড়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। নারী কর্মীদের ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে অর্থনীতিতে এক বিলিয়ন ডলার বা আফগানিস্তানের জিডিপি ৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সিমা বাহুস গত মে মাসে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান।
তালিবানের সবশেষ শাসনামলে (১৯৯৬ থেকে ২০০১) নারীরা কাজ করতে পারত না। মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। নারীরা বাড়ির বাইরে বের হলে চেহারা ঢেকে ও পুরুষ সঙ্গীকে নিয়ে বের হতে হতো।
যারা এই আইন অমান্য করতেন ইসলামি শরিয়া আইনের কট্টর ব্যাখ্যার অধীনে তাদের জনসমক্ষে পেটাত তালিবানের ধর্মীয় পুলিশ।
রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যর্থ আলোচনা চালানো তালিবান পশ্চিমাদের কথা দেয়, নারীরাও ‘ইসলামী আইন’ অনুযায়ী কাজ করা ও শিক্ষা গ্রহণের সমান অধিকার পাবেন।
২০ বছর পর গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান দখলে নেয় তালিবান। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তালিবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়। অবশ্য সরকার গঠন করলেও বিশ্বের কোনো দেশই এখনও পর্যন্ত তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এর জেরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থাও আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তালিবানের আফগান দখলের পর থেকেই দেশটিতে নারীদের অবস্থান নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। অত্যাচার নিপীড়নের পাশাপাশি বাড়ি থেকে কম বয়সী নারীদের জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া এমনকি মৃতদের ধর্ষণের অভিযোগও উঠেছে তালিবানের বিরুদ্ধে। আফগানিস্তানে নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রা থমকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। কর্মজীবী নারীদের উপর নেমে আসছে নিয়মের খড়গ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯১৬
আপনার মতামত জানানঃ