ভারতে ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে আইনে সংশোধনী আনতে যাচ্ছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। আগামী সপ্তাহের সংসদ অধিবেশনে ওই বিল উত্থাপন করা হতে পারে বলে জানায় স্থানীয় গণমাধ্যম। বিলটি পাস হলে বিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় শাস্তির আওতায় আসবে ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমগুলো।
দেশটির কোনো আইন কিংবা সরকারি বিধিতে এখন পর্যন্ত ডিজিটাল মাধ্যমকে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। নতুন বিলে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যম নিবন্ধন আইনে তা অন্তর্ভুক্ত হবে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম ও ছাপাখানা নিবন্ধন আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। নতুন বিলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সংবাদমাধ্যম ও সাময়িকপত্র নিবন্ধন বিল’। এই বিলে ‘যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সাহায্যে ডিজিটাল মাধ্যমে সংবাদ’ বিষয়ক বিধি থাকবে।
ভারতে ব্রিটিশ আমলের প্রেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অফ বুকস (পিআরবি) অ্যাক্ট, ১৮৬৭ এর পরিবর্তে নতুন আইন প্রেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অফ পিরিওডিকালস বিল, ২০২২ দেশটির সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে পেশ করবে ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার।
ভারতে ১৮ জুলাই থেকে শুরু হবে সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ডিজিটাল নিউজ মিডিয়াকে আইনের পরিধিতে আনার জন্য সরকার ঔপনিবেশিক যুগের পিআরবি অ্যাক্ট, ১৮৬৭-এর পরিবর্তে প্রস্তাবিত প্রেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অফ পিরিওডিকালস (পিআরপি) বিল,২০২২ তৈরী করেছে।
এই আইনের মাধ্যমে ভারতে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমকে আইনের আওতায় আনা হবে।
আইন ভঙ্গ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব থাকবে বিলে।
আইন পাশ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমগুলোকে তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করতে হবে। এই আবেদন করতে হবে প্রেস রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে।
আইন ভাঙলে রেজিস্ট্রার জেনারেল রেজিস্ট্রেশন বাতিল কিংবা স্থগিত করতে পারবেন।
ডিজিটাল মিডিয়ার রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হবে দেশটির তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে এর জন্য একটি পৃথক বোর্ডও গঠন করা হবে।
সরকার ডিজিটাল মিডিয়াকে কব্জা করার জন্যই আইন আনতে চলেছে। এমনিতেই দেশে নানাভাবে সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চলছে। সরকারের বিরুদ্ধে কিছু প্রচার হলেই সেই সংবাদমাধ্যমকে হেনস্তা করা হচ্ছে।
বর্তমানে প্রথাগত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিভিন্ন আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলেও ডিজিটাল নিউজ প্ল্যাটফর্মগুলো কোনো নিবন্ধন প্রক্রিয়ার আওতায় পড়ে না। শিল্প সমিতিগুলো বলছে, এটি করার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
ভারতে গত বছর দেশটির সরকার তথ্য প্রযুক্তি (ইন্টারমিডিয়ারি গাইডলাইনস এবং ডিজিটাল মিডিয়া এথিক্স কোড) বিধিমালা, ২০২১ প্রবর্তন করেছে, যার অধীনে ডিজিটাল নিউজ প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য সরকারের কাছে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল
এর আগেও ডিজিটাল মিডিয়াকে তথ্য প্রযুক্তি আইনের আওতায় আনার চেষ্টা হয় ২০১৯ সালে। তখন তা নিয়ে দেশে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। মিডিয়া মহল মনে করছে, এবার সরকার ডিজিটাল মিডিয়াকে কব্জা করার জন্যই আইন আনতে চলেছে। এমনিতেই দেশে নানাভাবে সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চলছে। সরকারের বিরুদ্ধে কিছু প্রচার হলেই সেই সংবাদমাধ্যমকে হেনস্তা করা হচ্ছে। বিরোধীদের অভিযোগ, দেশে এখন অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে।সেই সময় বিরোধীরা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিল।
ভারতে সংবাদমাধ্যম ও ছাপাখানাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তৈরি হয়েছিল প্রেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অফ বুক অ্যাক্ট, ১৮৬৭। ব্রিটিশ যুগের এই আইনের পরবর্তী কালে অনেক সংশোধন করা হয়। কিন্তু এবার ডিজিটাল মিডিয়াকে আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার এই চেষ্টাকে আসলে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের সমান বলে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১২৬
আপনার মতামত জানানঃ