অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে বেসামরিক বিমান ও সমুদ্র পথে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। অবশেষে সামরিক বিমানে করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৩টার দিকে মালদ্বীপের রাজধানী মালে তিনি পৌঁছেছেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে কয়েক দশক ধরে শ্রীলঙ্কার ক্ষমতায় থাকা রাজাপাকসে পরিবারের পতন হয়েছে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিমানবাহিনী জানায়, শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুসারে নির্বাহী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অনুসারে বর্তমান সরকারের অনুরোধ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে গোতাবায়াকে তারা বিমান দিয়ে সাহায্য করেছে।
একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য ডেইলি মিরর জানায়, গোতাবায়া যেন মালদ্বীপের বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারে তার অনুমতি দেওয়ার জন্য মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিমকে অনুরোধ করেছিলেন।
তবে গোতাবায়া মালদ্বীপ হয়ে অন্য দেশে চলে যাবেন বলে জানা গেছে। কিন্তু কোন দেশে যাবেন তা এখনও জানা যায়নি।
বিবিসি আরও জানিয়েছে, গোতাবায়া রাজাপাকসের ভাই ও সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসেও দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বাসিল।
এদিকে গোতাবায় দেশ ছেড়েছেন জেনে উল্লাস করেছে বিক্ষোভকারীরা। রাজধানী কলম্বোতে গলে ফেস গ্রিন পার্কে মঙ্গলবার বিকেল থেকে যোগ দিতে থাকে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী।
কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের জন্য শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের প্রশাসনকে দায়ী করে দেশটির মানুষ। কয়েক মাস ধরে তারা প্রতিদিনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধের মতো মৌলিক জিনিসের ঘাটতির কারণে ভুগছেন।
দেশটির প্রেসিডেন্ট থাকাকালে কাউকে বিচারের আওতায় আনা যায় না। নতুন প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পরে গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা এড়াতে পদত্যাগ করার আগে গোতাবায়া বিদেশে পালিয়ে গেলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আর গোতাবায়া দেশ ছেড়েছেন—এ খবরে অনেক জায়গায় বিজয় উদ্যাপন করা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর রাস্তায় নেমে এসেছেন সাধারণ মানুষ।
গোতাবায়া দেশ ছেড়েছেন—এ খবরে অনেক জায়গায় বিজয় উদ্যাপন করা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর রাস্তায় নেমে এসেছেন সাধারণ মানুষ
গত মার্চ থেকে শ্রীলঙ্কায় চলছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ । গত শনিবার শত শত বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বাসভবনে ঢোকে। এরপর এদিন রাতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন গোতাবায়া। ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার তার পদত্যাগের কথা। এর আগে তিনি দেশ ছাড়লেন।
পদত্যাগের আগেই গত সোমবার রাতে তিনি দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তবে বিমানবন্দরে অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে আটকে দেন। পরে তিনি নৌপথে পালানোর চেষ্টা করেন। গোতাবায়ার ভাই সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসেও এদিন পালানোর চেষ্টা করেন।
শ্রীলঙ্কায় ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের সুযোগ নেই । গোতাবায়া আশঙ্কা করছিলেন, প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এ জন্য তিনি সোমবার রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের উদ্দেশে দেশত্যাগের চেষ্টা করেন। তবে অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে আটকে দেন। তিনি ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের ১৫ সদস্য আরব আমিরাতের চারটি ফ্লাইট ধরতে পারেননি। পরে বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশের সামরিক ঘাঁটিতে ফিরে যান তারা
দেশত্যাগের আগে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। সোমবার তিনি পদত্যাগপত্রে সই করেন বলে জানা গেছে। গোতাবায়া পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেছেন। ওই কর্মকর্তা পদত্যাগপত্রটি স্পিকারের কাছে হস্তান্তর করবেন।
গোতাবায়ার পদত্যাগপত্র কার্যকর হবে বুধবার (১৩ জুলাই) থেকে। স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগপত্রের কথা জানাবেন।
প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার।
শ্রীলঙ্কার স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে বলেন, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে তাকে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দিতে। সংবিধানের ৩৭ ধারার ১ অনুচ্ছেদের আওতায় এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনে শ্রীলঙ্কার চলমান অস্থিরতা নিয়ে দেওয়া লাইভ আপডেটে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
রনিল বিক্রমাসিংহকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগের ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেননি গোতাবায়া। এমনকি গোতাবায়ার সম্প্রতি দেওয়া সব ঘোষণাই হয় পার্লামেন্টের স্পিকার, না হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে আসছে।
এদিকে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে গণ–আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। তারা গোতাবায়া ও রনিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এখন দেখার বিষয়, স্পিকারের এ ঘোষণার পর বিক্ষোভকারীরা কী প্রতিক্রিয়া দেখান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০২
আপনার মতামত জানানঃ