যুগে যুগে বিশ্বে বহু সভ্যতার উত্থান ও পতন ঘটেছে। তবে একমাত্র ভারতীয় সভ্যতা প্রকান্ড ক্ষয়ক্ষতিকে সহ্য করেও হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস সঠিকভাবে জানা খুবই কঠিন বিষয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, ভারতের ইতিহাসের বেশিরভাগই অংশ গৌরবময়। তা সত্ত্বেও বর্তমানে ভারতের পাঠ্যপুস্তকে যা পড়ানো হয় তার ৯৯ শতাংশ দাসত্বের ইতিহাস।
পাঠ্যপুস্তকে হিন্দু রাজা রানীদেরদের মহান বীরগাঁথার পরিবর্তে আক্রমনকারীদের ইতিহাস পড়ানো হয়। ভারতের ইতিহাসের পাঠ্যবই থেকে যে সমস্ত মহান ইতিহাস বাদ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে পড়ে হিন্দু অহোম সাম্রাজ্য। যুদ্ধে মুঘলদের প্রায় ১৭ বার পরাজিত করেছিল অহোম সাম্রাজের সেনা।
মুঘলদের সাথে অহোম সাম্রাজের যুদ্ধগুলির মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ছিল সরাইঘাটের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে মুঘলদের হাতে ছিল বিশাল সেনা, অন্যদিকে অহোম সাম্রাজের কাছে ছিল পূর্ব ভারতের শিবাজি তথা লাচিত বরফুকান।
বলা বাহুল্য সাধারণ মানুষ লাচিত বরফুকানকে চেনা তো দূরের কথা নাম পর্যন্ত শোনেনি। কিন্তু ভারতীয় সেনা আজও এই মহান হিন্দু যোদ্ধাকে সেলামি প্রদান করে। ভারতীয় সেনার অফিসারদের ট্রেনিং পুনেতে হয়। সেখানে লাচিত বরফুকানের স্ট্যাচু ভারতীয় সেনারআ লাগিয়ে রেখেছে। ভারতীয় সেনার অফিসারদের যখন ট্রেনিং দেওয়া হয় তখন তাদেরকে লাচিত বরফুকানের বিষয়ে জানানো হয়, যুদ্ধ কৌশল শেখানো হয়।
এই মহান হিন্দু যোদ্ধার জন্ম ২৪ শে নভেম্বর ১৬২২ সালে হয়েছিল। লাচিত বরফুকান মূলত অসমের বাসিন্দা ছিলেন। উনি অসমের হিন্দু অহম সাম্রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন। ১৬৭১ সালে মুঘল কট্টরপন্থীদের সেনা অহম সাম্রাজ্যের উপর হামলা করেছিল এবং সেই সময় সম্রাজ্যের কামান লাচিত বরফুকানের হাতে ছিল।
একদিকে ছিল অহম সাম্রাজ্যের ছোট সেনা অন্যদিকে ছিল মুঘলদের বিশাল সেনা। ১৬৭১ সালের এই যুদ্ধ সরাইঘাটের যুদ্ধ হিসেবেও প্রসিদ্ধ। এই যুদ্ধ অসমের তরাই এলাকায় ঘটিত হয়েছিল। মুঘলরা হিন্দু রাজ্যকে শেষ করে সেখানের সম্পত্তি লুটপাট, ও নারীদের শোষণ করার উদ্যেশে হামলা করেছিল।
এই যুদ্ধে কট্টর জিহাদি ওরংজেবের মামা শায়েস্তা খানও ছিল। লাচিত বরফুকানের সেনা প্রথমে যুদ্ধ থেকে পেছনে সরে যাচ্ছিল কারণ মুঘলদের তুলনায় এই সেনা খুবই ছোটো ছিল। অন্যদিকে মুঘলরা গুয়াহাটিতে কব্জাও করে নিয়েছিল। অহম রাজ্যের রাজাও এটা ভাবছিলেন যে উনার হার এবার নিশ্চিত।
কিন্তু তৎপর যুদ্ধের সঞ্চালন লাচিত বরফুকানের হাতে আসে। উনি তার পুরো হিন্দু সেনাবাহিনীর সাথে বার্তালাপ করেন। লচিত বরফুকান বলেন, যদি কারোর যুদ্ধভুমি থেকে পলায়ন করার ইচ্ছা থাকে তাহলে যেতে পারে কিন্তু আমি শেষ নিঃশ্বাস অবধি লড়াই করবো। যে সৈনিক যুদ্ধভুমি থেকে পলায়ন করবে সে যেন রাজাকে বলে দেয়, তার সেনাপতি কারোর পরোয়া না করে লড়ে গেছে।
সৈনিকদের মধ্যে এমন জোশ ঢুকিয়ে দেন যে অহম রাজ্য মুঘলদের সামনে ঝুঁকতে অস্বীকার করে। মাতৃভূমিকে ও মা বোনদের সন্মান রক্ষার জন্য হিন্দু অহোম সেনা দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ হয়। তারা বুঝতে পারে যে একবার সাম্রাজ্য মুঘলদের হাতে গেলে কোনো হিন্দু নারীর সম্মান রক্ষা পাবে না।
লচিত বরফুকানের বক্তব্য শোনার পর হিন্দু অহোম সেনা যে তাণ্ডব করেছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা অত্যন্ত কঠিন। তান্ডব এমন হয় যে মুঘলদের গাজর, মুলোর মতো কেটে দেয় হিন্দু সেনারা এবং গুয়াহাটিকে মুঘলদের হাত থেকে মুক্ত করে। যুদ্ধ বেশ কিছু দিন ধরে চলেছিল, সেই সময় চারদিকে হর হর মহাদেব এবং ধ্বনি শোনা যেত। শেষমেষ মুঘল সেনা অসম থেকে পালয়ন করে। লাচিত বরফুকানের মাত্র ৪০০০ সেনা মুঘলদের বিশাল সেনাকে হারিয়ে দেয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৫৫
আপনার মতামত জানানঃ