কুঞ্চিত চামড়া, ক্ষীণ দৃষ্টি, লাঠি ধরে চেয়ারে বসে থাকার যে ছবি ফুটে ওঠে, তার সঙ্গে কোনো মিল পাবেন না দ্বীপ ইকারিয়ায়। ইকারিয়ার বাসিন্দাদের রোগ-ব্যাধি বলতে কিছু নেই।
ইকারিয়ায় বাস করেন হাজার দশেক মানুষ। আয়তন মাত্র ২৫৪ বর্গ কিলোমিটার। বিশ্বময় এত রোগব্যাধির মধ্যে এই দ্বীপের মানুষ বাস করছে বেশ সুস্বাস্থ্য নিয়ে। সেখানকার মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর। আর এই ১০০ বছরেও লাঠি-নির্ভর নন এখানকার বাসিন্দারা। পাহাড়ি সিঁড়ি ভেঙে একাই উঠে যান গির্জায়।
শয্যাশায়ী, মরতে বসা ক্যানসারের রোগীও এখানে এসে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন বিনা চিকিৎসায়। তারপর হৈ হৈ করে কাটিয়ে ফেলতে পারেন অনেক বছর! এমনই জাদু রয়েছে এই দ্বীপে।
এমন ঘটনাই ঘটেছিল ইকারিয়ার বাসিন্দা স্ট্যামাটিস মোরাইটিসের সঙ্গে। দীর্ঘদিন স্ট্যামাটিস ইকারিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে আমেরিকার ফ্লোরিডায় থাকতেন।
১৯৭৬ সালে একদিন হঠাৎই ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছেন তিনি। তার মাত্র নয় মাস আয়ু রয়েছে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
স্ট্যামাটিসের তখন ৬০ বছর বয়স। জীবেনর শেষ সময়টা তিনি ইকারিয়ায় ছেলেবেলার বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতে চেয়েছিলেন। স্ত্রীর সঙ্গে ইকারিয়ায় ফিরে আসেন তিনি।
কিন্তু সেখানে আসার মাস খানেক পর থেকেই যেন তার জীবনের ঘড়ি উল্টো দিকে চলতে শুরু করে। ক্রমে সুস্থ বোধ করতে শুরু করেন তিনি। শয্যাশায়ী মানুষটা একাই হাঁটাচলা শুরু করেন।
এমনকি নিজের জমিতে চাষ করে অলিভও ফলান! ৯০ বছর পর্যন্ত বেঁচেছিলেন তিনি। এ রকম ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে এই দ্বীপে।
তবে, এ দ্বীপ নিয়ে বারবার উঠেছে নানা প্রশ্ন। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শতায়ুর সংখ্যা এই দ্বীপে কেন? কেন এখানে মানুষ কম অসুখে ভোগেন? বিশ্বে ভয়ানক হারে বাড়তে থাকা ক্যানসার এবং হৃদরোগ এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে দেখাই যায় না, সেটা কীভাবে সম্ভব? প্রচুর গবেষণাও হয়েছে এ নিয়ে।
তাদের লাইফস্টাইল গবেষণায় দেখা যায়, বেশি শাক-সবজি, ফল খান তারা। ফাস্ট ফুড একেবারেই চলে না এখানে। মাছ-মাংসও পরিমাণে খুব কম খান এখানকার বাসিন্দারা। মৎস্যজীবী, কৃষক, পশুপালন এসবই এখানকার মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস। আর পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আলাদা করে শরীরচর্চারও প্রয়োজন হয় না। দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই সেটা সম্পূর্ণ হয়।
২০০০ সালে ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক এক্সপ্লোরার এবং লেখক ড্যান বুয়েটনার এই দ্বীপের জীবনযাপন নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন, যার নাম ‘দ্য ব্লু জোনস সলিউশন’। ইকারিয়াদের দীর্ঘায়ু হওয়ার ‘রহস্য’ লেখা রয়েছে ওই বইয়ে।
এমন নানা লেখকের বই কিংবা গবেষণায় বারবারই উঠে এসেছে তাদের লাইফস্টাইলের বিষয়টি। তাদের চিন্তামুক্ত জীবনযাত্রা, খাদ্যাভাস এবং দ্বীপের জলবায়ু কারণের সুস্থতা সমেত দীর্ঘায়ু হচ্ছেন তারা, এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা
এসডব্লিউ/এসএস/২০১৫
আপনার মতামত জানানঃ