ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার কারণে লোকজনের ওপর হামলা ও উপাসনালয় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেড়েছে। ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ২০২১ সালজুড়ে হত্যা, হেনস্তা, হুমকিসহ নানা ধরনের হামলার শিকার হয়েছে বলে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিস্থিতি এবং ধর্ম পালনের স্বাধীনতার লঙ্ঘনকে নিজস্ব আঙ্গিক থেকে তুলে ধরা হয়। এতে প্রত্যেক দেশের জন্য আলাদা করে অধ্যায় রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারত। দেশটিতে বহু ধর্মবিশ্বাসের লোকজনের বসবাস। আমরা লোকজন এবং উপাসনালয়ের ওপর ক্রমবর্ধমান হামলার ঘটনা লক্ষ করেছি।’
প্রতিবেদনটি ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় স্বাধীনতার অবস্থা মূল্যায়ন করে তৈরি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের আইআরএফ বিভাগ এটি প্রস্তুত করে। এর নেতৃত্বে ছিলেন আইআরএফ দূত রাশাদ হুসাইন।
বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, যেমনটা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে এসেছে, ভারতে লোকজন এবং উপাসনালয়ে ক্রমবর্ধমান হামলার ঘটনা কিছু কর্মকর্তা না দেখার ভান করছেন, এমনকি বিষয়টি সমর্থন করছেন।
প্রতিবেদনে ভারতের বিষয়ে বলা হয়, হত্যা, মারধর, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর হামলা বছরজুড়ে ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্যে গরু জবাই অথবা গরুর মাংস বিক্রির অভিযোগে অহিন্দুদের ওপর গো-রক্ষকদের হামলার ঘটনাও রয়েছে। এতে ধর্মান্তর ঠেকাতে করা আইনের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে গত বছর ভারতের ত্রিপুরা, রাজস্থান এবং জম্মু ও কাশ্মীরে কয়েকটি ঘটনায় মুসলিমদের পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও উল্লেখ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, ধর্মীয় স্বাধীনতা কেবল মৌলিক অধিকারই নয়, এটা ‘পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারও’ বটে।
হত্যা, মারধর, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর হামলা বছরজুড়ে ঘটেছে।
বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতোপূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ভারত।
প্রতিবেদনটি প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ভোটব্যাংকের রাজনীতি অনুসৃত হচ্ছে। এটা নিতান্তই দুর্ভাগ্যের বিষয়। উদ্দেশ্যমূলক ও পক্ষপাতদুষ্ট মতামত পরিহার্য হওয়া মঙ্গলের। ভারত বহুত্ববাদী একটি দেশ। এ দেশে মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্মান পায়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ভারত সব সময় সে দেশের উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরে। জাতি ও বর্ণগত যেসব আক্রমণ ঘটছে, বন্দুকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে, হেট ক্রাইম বেড়ে যাচ্ছে, সেসব নিয়ে ভারত তার উদ্বেগের কথা জানিয়ে আসছে।
দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো দেশের নাগরিকদের সংবিধানে সুরক্ষিত অধিকার নিয়ে মন্তব্যের অধিকার নেই অন্য দেশের সরকারের।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের ভারতীয় অংশে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে কোনো মতামত দেয়া হয়নি, তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও ভারত সরকারের প্রতিবেদনগুলোতে সংখ্যালঘুদের অবস্থার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।
এর বাইরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থা, সংখ্যালঘুবিষয়ক সংস্থার বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে, তবে সরকারি কর্মকর্তাদের তদন্তের ফল কিংবা সরকারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো বক্তব্য ছিল না তাতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বস্তুত, ভারতের গণতন্ত্রের অবনমন, মানবাধিকার হরণ, ঘৃণা ভাষণ, সংখ্যালঘুদের প্রতি আক্রমণ–সংক্রান্ত যেসব অভিযোগ আন্তর্জাতিক স্তরে ওঠে এবং এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়, সব সময় ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধাচরণ করে। ফ্রিডম হাউস, ভি ডেম ইনস্টিটিউট অথবা জাতিসংঘের বিভিন্ন কমিটির প্রতিবেদনের বিরুদ্ধেও ভারত সব সময় সরব থেকেছে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু ঘটনা হলো, বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘুদের হয়রানি ও হেনস্তার ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। হিজাব-হালাল বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। জোর করে নিরামিষ খাওয়ানো হয় সরকারি শিক্ষালয়ে। হিন্দু উৎসবের সময় জবরদস্তি মাছ-মাংসের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। আজানের মাইক বন্ধ করার মতো ঘটনাও ঘটে চলেছে। সেই সঙ্গে রয়েছে গোরক্ষার নামে গোরক্ষক বাহিনীর তাণ্ডব। এর মধ্যে নতুন করে শুরু হয়েছে মন্দির-মসজিদ বিতর্ক। এই আবহে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদন ভারতের অসন্তুষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫২৭
আপনার মতামত জানানঃ