প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পরিযায়ী পাখির অভয়াশ্রম ঘোষণা করা একটি নদে ড্রেজার বসিয়েছে বালু ব্যবসায়ীরা। ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনে যে বিকট শব্দ হচ্ছে, সে কারণে অভয়াশ্রমে পরিযায়ী পাখি আসার হার কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। স্থানীয় প্রশাসন বালু ব্যবসায়ীদের থামাতে এখনো কোনো উদ্যোগ নিয়েছে বলে চোখে পড়েনি। নওগাঁর মহাদেবপুরে আত্রাই নদের মধুবন এলাকায় পরিযায়ী পাখির অভয়াশ্রমটি এখন বিপন্ন হওয়ার মুখে।
জানা যায়, স্থানীয় একটি সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে পরিযায়ী পাখির যাতে কোনো সমস্যা না হয় এজন্য চলতি বছর নদ থেকে বালি উত্তোলনেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু ওই এলাকায় ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি মহল। অভয়াশ্রম এলাকায় বালি উত্তোলন বন্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে প্রশাসন এখনো নির্বিকার, ঘটনা অবগত হলেও অদ্যাবধি কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করেনি এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদের মধুবন, কুঞ্জবনসহ কয়েকটি স্থানের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সরালি, পানকৌড়ি, ডুবরিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি বিচরণ করে। স্থানীয় সংগঠন প্রাণ ও প্রকৃতি এসব পাখি রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। পাখির অভয়াশ্রম ঘোষিত এলাকায় বালিমহাল লিজ বন্ধের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল সংগঠনটি।
এরই অংশ হিসেবে চলতি বছর প্রশাসন ওই বালিমহাল লিজ না দিলেও প্রভাবশালী একটি মহল ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বালি উত্তোলন বন্ধের নির্দেশও দেয়া হয়। কিন্তু প্রশাসনের কর্মকর্তারা চলে যাওয়ার পর পুনরায় বালি উত্তোলন করছে প্রভাবশালী এ মহল।
প্রাণ ও প্রকৃতির সভাপতি কাজি নাজমুল হক বলেন, মধুবন এলাকায় বালিমহাল সরকারিভাবে লিজ না দিলেও সাঈদ হাসান শাকিল ও তার সহযোগী হাজী মোয়াজ্জেম প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে বালি উত্তোলন করছে। ভয়ভীতি দেখিয়ে অভয়াশ্রম এলাকা থেকে বালি উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে তারা।
স্থানীয় শামছুউদ্দিন বলেন, বাঁশ দিয়ে পাখি কলোনি (অভয়াশ্রম) তৈরি করা হয়েছে। ওই অংশটি উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে ঘোষিত মাছেরও অভয়াশ্রম। এখানেই প্রতি বছর পাখি এসে বসে। তার পরও প্রভাবশালী মহলটি ওই এলাকায় ড্রেজার বিষয়ে বালি উত্তোলন করে আসছে। ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালি উত্তোলন করায় আশপাশে জমিগুলো নদের মধ্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে পাখিদের বিচরণেও অসুবিধা হচ্ছে।
সাঈদ হাসান শাকিলের সহযোগী হাজী মোয়াজ্জেম স্থানীয়দের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ওই অংশ থেকে বালি উত্তোলন করছি। এতদিন এটাকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়নি। শত্রুতার জেরে সম্প্রতি ওই এলাকাকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করে হয়রানি করা হচ্ছে।
মহাদেবপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা একেএম জামান বলেন, ‘মা’ মাছ রক্ষায় নদের ওই অংশকে মৎস্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে আবারো বালি উত্তোলন করা হচ্ছে কিনা তা জানা নেই।
মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ওই এলাকায় বালি উত্তোলনের সুযোগ নেই। বালি উত্তোলনের বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসডাব্লিউ/এমএন/আরা/১৬৩৫
আপনার মতামত জানানঃ