মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার। তবে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে অবৈধ মাদক চোরাকারবারের শীর্ষ তালিকাভুক্ত পৃষ্ঠপোষককে।
জেলার মাদক চোরাকারবারিদের ১৬ জন পৃষ্ঠপোষকের তালিকায় প্রথম নামটিই আরফানুল হক রিফাতের।
গত শুক্রবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তাকে মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক শুরু হয়।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ১৭ মে, যাচাই-বাছাই ১৯ মে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৬ মে। আগামী ১৫ জুন এ সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে দেশের ছয়টি পৌরসভা ও ১৩৫ ইউনিয়ন পরিষদেও ভোটগ্রহণ হবে।
গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেশের মাদক চোরাকারবারি, তাদের পৃষ্ঠপোষক ও এর সঙ্গে সংশ্লিস্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তালিকা করা হয়।
২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চট্টগ্রাম বিভাগের তালিকাসহ একটি চিঠি পাঠায় এবং যাচাই-বাছাইয়ের পর তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানায়।
এই তালিকাউ মনোহোরপুর এলাকার বাসিন্দা রিফাতকে কুমিল্লা শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দলটির স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড গত শুক্রবার গণভবনে এক বৈঠকে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে রিফাতের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে। এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রিফাত কুমিল্লা জেলা যুবলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বর্তমানে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তিনি কুমিল্লা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম বাহাউদ্দিন বাহারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি।
বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে কুমিল্লা শহর আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ বর্ধিত সভায়, ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিফাতকে দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে প্রস্তাব পাঠায়।
রিফাতের ঘনিষ্ঠ সূত্র ও আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, মাদক চোরাকারবার থেকে কমিশন পাওয়ার কারণে তিনি স্থানীয় মাদক চোরাকারবারি ও অপরাধীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। তবে প্রত্যক্ষভাবে এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর কুমিল্লার একটি সংবাদমাধ্যম জানায়, পিস্তল, দেশীয় অস্ত্র ও ৭৮টি গুলিসহ র্যাবের হাতে আটক হওয়া জাহিদ ইকবাল শরিফুলের সঙ্গে রিফাতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
তবে রিফাতের দাবি, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ‘ষড়যন্ত্র’ ছাড়া আর কিছুই নয়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে একজন নিবেদিত প্রাণ ও পরীক্ষিত নেতা হিসেবেই চিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রিফাত ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। দল যখন সংকটে ছিল, তখন তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ নেতা।’
হানিফ আরও বলেন, ‘বিএনপি সরকার তার বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা মামলা করেছে। আমি জানি না, ওই তালিকা তৈরির সময় ওই মামলাগুলো বিবেচনা করা হয়েছিল কি না।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হলে হানিফ বলেন, এ বিষয়ে তার কোনো ধারণা নেই।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, এ ধরনের কোনো তালিকা সম্পর্কে তিনি অবগত নন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মোকাব্বির হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠিটি না দেখে এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ১৪ জনের একজন মাসুদ পারভেজ ইমরান। তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন চূড়ান্ত করার সময় কিছু ভুল হতে পারে। আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি জানার পর সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।’
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মতে, কুমিল্লা জেলার সঙ্গে ভারতের ১০৬ কিলোমিটার সীমানা দিয়ে বাংলাদেশে মাদক চোরাচালান করা হয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৫০
আপনার মতামত জানানঃ