পাকিস্তানের উপজাতীয় অঞ্চলের নারীরা পূর্বে ফেডারেল অ্যাডমিনিস্টার্ড ট্রাইবাল এরিয়াস (এফএটিএ) এজেন্সির অধীনে শাসিত ছিল। এক মিডিয়া রিপোর্টের খবরে বলা হয়েছে, এসব অঞ্চলের নারীরা মৌলিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক নিষেধাজ্ঞার দ্বারা আবদ্ধ জীবনের সম্মুখীন।
ডেইলি টাইমসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই অঞ্চলের নারীরা দাসত্বের অধীনে বাস করছে, একইসঙ্গে পারিবারিক ঐতিহ্যে আবদ্ধ এবং প্রজন্মের অভিশাপ থেকে বেঁচে আছে। এসব নারীকে মাঝে মাঝে তাদের জীবনের মূল্য দিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
কয়েক দশক ধরে অসহিষ্ণু পরিবেশ এবং সামরিকীকরণ অবস্থার কারণে এই অঞ্চলটি স্থানীয় রাজ্য কর্তৃপক্ষের প্রবেশ করা বেশ কঠিন। এমনকি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরেও পরিস্থিতি এখনও একই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীর প্রতি বৈষম্য পাকিস্তানজুড়ে আছে তবে এসব অঞ্চলে নারী অধিকারের অবস্থা অন্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় অনেক খারাপ।
এদিকে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর, খাইবার পাখতুনখোয়া, সিন্ধু এবং গিলগিট-বালতিস্তানে জনগণের ওপর সরকারি নিপীড়ন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন দেশটির মানবাধিকার কর্মীরা।
নারীর জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় পাকিস্তান বিশ্বে ছয় নম্বরে অবস্থান করছে৷ যৌন নির্যাতন ও পারিবারিক সহিংসতার হার বেড়েই চলেছে দেশটিতে৷ দেশটির অধিকাংশরাই মনে করেন নারীরা অনিরাপদ।
সম্প্রতি করাচিভিত্তিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান পালস কনসালট্যান্ট এক জরিপে জানিয়েছে, দেশটির ৩৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন পাকিস্তানি কোনো নারীই নিরাপদ নন। ৪৩ শতাংশের মতে, কিছু দিক থেকে নারীরা নিরাপদ। ২০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, নারীরা নিরাপদ পাকিস্তানে।
২০০২ সালে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়া অধিকারকর্মী মুখতার মাই-এর মতও একই৷ তিনি বলেন, যারা নারীর প্রতি সহিংসতা করে, তারা আইনি প্রক্রিয়াকে ভয় করে না৷
তিনি জানান, বেশিরভাগ পাকিস্তানি পুরুষ নারীকে পেটানোকে কোনো সহিংসতাই মনে করে না৷ পাকিস্তানি সমাজ এখনও সামন্তবাদী এবং গোত্রবাদী প্রথা থেকে বের হতে পারেনি বলেও মনে করেন তিনি৷
সমাজের পুরুষতান্ত্রিক আচরণকেও দায়ী করেন অনেকে৷ লাহোর-ভিত্তিক নারীবাদী আন্দোলনকারী মাহনাজ রেহমান বলেন, যখনই নারীরা তাদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয় তখনই তাদের সহিংসতার শিকার হতে হয়৷
তিনি বলেন, নারীদের শিক্ষা দেয়া হয় পুরুষকে মান্য করে চলার জন্য, কারণ, পরিবারে তাদের স্ট্যাটাস উঁচুতে৷
লাহোর-ভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্ট সাজিয়া খান মনে করেন, কিছু কিছু পুরুষ ধর্মীয় শিক্ষার কারণে নিজেদের আলাদা ভাবতে শুরু করেন৷
তিনি বলেন, আলেমরা এমনভাবে ধর্মের ব্যাখ্যা দেন যে পুরুষরা মনে করে তারা নারীদের পেটাতেই পারে৷ তারা বাল্যবিয়েও সমর্থন করে এবং নারীদের বলে, স্বামী মারধর করলেও তাকে মেনে চলতে৷
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৪৩
আপনার মতামত জানানঃ