প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শুধু ঢাকাতে নয়, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মজীবী নারী হোস্টেল করে দেব, যেন নারীরা কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষিত থাকে।’ ৯ ডিসেম্বর ২০২০, গতকাল বুধবার বেগম রোকেয়া দিবসে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রোকেয়া পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে এমন প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রতিশ্রুতিতে কর্মজীবী নারীদের মধ্যে আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন হলে কর্মজীবী নারীরা নানা ধরনের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সমাজে যেখানে অর্ধাংশ নারী, একটা সমাজকে যদি উন্নত করতে হয়, তারা সমানভাবে যদি নিজেদের তৈরি করতে না পারে, তাহলে সেই সমাজ কীভাবে গড়ে উঠবে? সমাজের অর্ধাংশকে আমরা যদি এগোতেই না দিই, তাহলে কী করে একটা সমাজ দাঁড়াতে পারে। সমাজকে তো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হবে।’
শীর্ষপর্যায়ে নারীদের নেতৃত্বে থাকার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সংসদে একটা ইউনিক অবস্থা। স্পিকার নারী, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা সবাই নারী। দীর্ঘদিন এ ব্যবস্থাটা চলছে। বিশ্বব্যাপী এটা একটা খুব সমাদৃত হয়।’ নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতিতে ভূমিকার জন্য পাঁচজনকে চলতি বছরের বেগম রোকেয়া পদক দেওয়া হয়। নারী শিক্ষায় অবদানের জন্য অধ্যাপক শিরীন আখতার এবং পেশাগত উন্নয়নের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ভূমিকার জন্য কর্নেল ডা. নাজমা বেগম এবার রোকেয়া পদক পেয়েছেন। নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য মঞ্জুলিকা চাকমা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে ভূমিকার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বেগম মুশতারী শফি এবং নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার এ সম্মাননা পেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদকজয়ীদের হাতে সম্মাননা, সনদ ও চেক তুলে দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা। এ সমস্যার সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে আমরা হেল্প লাইন ১০৯ ও ৯৯৯ চালু করেছি। ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশের সাহায্য পাওয়া যায়। এভাবে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার পদক্ষেপ নিচ্ছি, যাতে সমাজে নারীরা নির্যাতিত না হন।’
নারীদের জন্য অনস্টপ সার্ভিস চালু করেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যখন আমাদের মেয়েরা নির্যাতনের শিকার হন, তখন যারা নির্যাতন করেছে তাদের খুঁজে বের করাও প্রয়োজন। আমরা ইতিমধ্যে ডিএনএ ল্যাবরেটরির ব্যবস্থা করেছি। ডিএনএ ল্যাবরেটরির মাধ্যমে যেকোনো অপরাধ হলে সেটাকে পরীক্ষা করে অপরাধীদের চিহ্নিত বা শনাক্ত করা সহজ হবে।’
সেই সময়ের সমাজে নারী শিক্ষার বাধাগুলো দূর করতে রোকেয়ার সংগ্রামের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেগম রোকেয়া তার ভাইয়ের থেকে শিক্ষা নিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে স্বামীর থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তার নামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে নারীদের স্কুলে আনতে গেলে সেই সময় অনেক বাধার মুখোমুখি হতে হতো তাকে। কষ্ট করেই তিনি শিক্ষার আলোটা জ¦ালিয়ে দিয়ে যান আমাদের জন্য। যার জন্য আজকে আমরা বলতে পারি, মেয়েরা অনেক সুযোগ পেয়েছি।’
কর্মক্ষেত্রে সব জায়গায় নারীদের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মেয়েরা এখন রেলগাড়িও চালাচ্ছে, আবার গাড়িও চালাচ্ছে। এয়ারফোর্সে মেয়েরা ভালো করছে, সবখানে তারা ভালো করছে।’ নারীরা যাতে পেশাগত জায়গায় ভালো করতে পারেন, নারী-পুরুষ সমানভাবে কাজ করতে পারেন, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের স্বাধীনতা অর্জন থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অবদানের কথা এ অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন সরকারপ্রধান। স্বাধীনতার পর নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে জাতির পিতার নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘নারীরা আর্থিকভাবে সচ্ছল হলে পরিবারে তার একটা গুরুত্ব থাকে এবং কীভাবে তারা আর্থিকভাবে সচ্ছল হবেন জাতির পিতা সেটা নিয়ে সবসময় চিন্তা করতেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে সবসময় এদিকটায় উদ্যোগ নিয়েছি।’
নারীর শিক্ষা নিশ্চিতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বৃত্তি দিচ্ছি, উপবৃত্তি দিচ্ছি। এমনকি আপনারা জানেন, প্রায় ১ কোটি ২০ লাখের ওপর যে উপবৃত্তি দিই, সেই বৃত্তির টাকাটা সোজা মায়ের নামে চলে যায়।’
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে রোকেয়া দিবসের এ অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ও সচিব কাজী রওশন আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
এসডাব্লিউ/এমএন/আরা/১২৩০
আপনার মতামত জানানঃ