গত সপ্তাহে খোস্ত ও কুনার প্রদেশে পাকিস্তানি বিমান হামলার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অভিযোগ দায়ের করেছে জাতিসংঘে আফগানিস্তানের তালিবান সরকার।
তারা জানিয়েছে, এ ভাবে যদি তাদের উপর প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি আক্রমণ চালাতে থাকে তবে তারাও সব মুখ বুজে সহ্য করবে না।
জাতিসংঘে মিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স নাসির আহমেদ ফাইক এক টুইট বার্তায় বলেন, পাকিস্তানের বিমান হামলা আফগানিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘনসহ আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, ১৮ এপ্রিল নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টকে দেয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ক্রমাগত গোলাবর্ষণ গত এক দশকের বেশি সময় ধরে চলছে। উদ্বেগের বিষয় হল, এ ধরনের আন্তঃসীমান্ত গোলাবর্ষণ বহু সংখ্যাক বেসামরিক নাগরিক হতাহত, স্থানচ্যুতি, সরকারী এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি ধ্বংসের কারণ হয়েছে।
‘এ ধরনের কাজ অবশ্যই নিন্দনীয় এবং এই আইনের লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতা দুই দেশের সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলবে এবং এটি আফগানিস্তান ও এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তাকে আরও অস্থিতিশীল করবে।’
পাকিস্তানের নেতৃত্ববৃন্দ আশা করেছিলেন আফগানিস্তানের তালিবান শাসন ইসলামাবাদকে ভারতের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সুবিধাজনক এবং কৌশলগত স্থান সরবরাহ করবে।কিন্তু তালিবান সরকার তার পূর্ববর্তী পরামর্শদাতা আইএসআই এর বিরুদ্ধে পরিণত হয়েছে।
গত ১৬ এপ্রিল আফগানিস্তানের কুনার এবং খোস্ত প্রদেশে পাক বিমান হামলায় মহিলা এবং শিশু-সহ অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ নিয়েই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে নালিশ জানিয়েছে আফগানিস্তানের তালিবান সরকার।
গত ১৬ এপ্রিল আফগানিস্তানের কুনার এবং খোস্ত প্রদেশে পাক বিমান হামলায় মহিলা এবং শিশু-সহ অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ নিয়েই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে নালিশ জানিয়েছে আফগানিস্তানের তালিবান সরকার।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে তালেবানদের অভিযোগ, পাকিস্তান ওই হামলা চালিয়ে আঞ্চলিক সীমা লঙ্ঘন করেছে। শুধু তা-ই নয়, একই সঙ্গে আফগানিস্তানের বাসিন্দাদের মানবিক অধিকারও লঙ্ঘন করেছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে লেখা একটি চিঠিতে আফগানিস্তানের বিদেশে বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত জানিয়েছেন, কীভাবে পাক বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আফগানিস্তানের সেনা শিবির, সেখানকার বাড়ি-ঘর এমনকী সরকারি ভবনও। ঘটনাটি দু’দেশের সম্পর্কের অবনতির বড় কারণ হয়ে উঠতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। একইসঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে তালিব সরকার এ কথাও বলেছে যে, ২০০২ সালে দু’দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল তা-ও লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান।
এর আগেও আফগানিস্তানের পূর্বতন সরকার আশরফ গনি সরকারে এক প্রতিনিধি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তবে এ বার পাক সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে তালিবান, হক্কানি নেটওয়ার্ক এবং তেহরিক-এ–তালিবানও।
আফগানিস্তানে তালিবানের জয়ে পাকিস্তানের গুরুতপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান নানাভাবেই তালিবানকে সমর্থন, আশ্রয়-প্রশ্রয় সবই দিয়েছে। আফগানিস্তানে শাসকের ভূমিকায় তালিবানের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করার আন্তর্জাতিক তৎপরতাও চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। এসবের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ বেঁধেছে।
গত বছর তালিবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা বেড়েছে। ইসলামাবাদ বরাবরই অভিযোগ করে আসছে যে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আফগান ভূখণ্ড থেকে নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে।
গত বছর তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত উত্তেজনার একটি উৎস হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, তালিবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানে অবস্থান নিয়ে থাকা জঙ্গিরা নতুন উদ্যমে পাকিস্তানে হামলা শুরু করেছে। অপরদিকে কোনো জঙ্গিকে আশ্রয় দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন আফগানিস্তানের কর্মকর্তারা।
বেশ কয়েক বছর ধরেই সীমান্তের অপর পাশ থেকে ছোড়া পাকিস্তানি গোলায় আফগানিস্তানে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে, কিন্তু শনিবারের বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা, সহিংসতা ও পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের সামরিক শক্তি ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ার ইঙ্গিত।
এ হামলার পরপরই এর নিন্দা জানায় তালিবান কর্মকর্তারা। পাকিস্তানের সামরিক বিমান হামলাটি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তারা।
তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিশ্বের সঙ্গে আফগান সরকারের যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার কাজটি করছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তার পূর্বসূরি ইমরান খানের মতো আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালিবানকে সাহায্য করবে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
আফগানিস্তান থেকে জঙ্গিরা পাকিস্তানে হামলা করছে— ইসলামাবাদের এ দাবি তালিবান অস্বীকার করেছে। তবে আল-জাজিরা বলছে, অভিযোগ অস্বীকার করলেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দুই দেশের সীমান্তে ২ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়া দেওয়ার ঘটনায় ইসলামাবাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছে তালিবান নেতৃত্ব।
এদিকে, পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার কাবুলের তালিবান সরকারকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইসলামাবাদের অভিযোগ, তারা ক্রমাগত সীমান্তের ওপার থেকে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হচ্ছে। সম্প্রতি উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলায় আফগানিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসীরা সাত সেনাকে হত্যা করেছে। এ অঞ্চলে তেহরিক–ই–তালেবান (টিটিপি) জঙ্গিরা এ ধরনের হামলার সঙ্গে জড়িত।
এদিকে অনাস্থা ভোটে হেরে ইমরান খানের সরে যাওয়ার পর দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রধান শাহবাজ শরিফ। কিন্তু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মন্ত্রিসভা গঠন করতে পারেননি তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯১৪
আপনার মতামত জানানঃ