বিস্ফোরণে আবারও কাঁপল আফগানিস্তান। অন্তত ৩৯ জন। বিস্ফোরণে রক্তাক্ত হলো আফগানিস্তান। দেশটির চার জায়গায় বৃহস্পতিবারের বোমা হামলায় অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছেন।
আইএস বলছে, মাজার-ই-শরীফ মসজিদে হামলায় তারা রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিস্ফোরিত বুবি-ট্র্যাপড ব্যাগ ব্যবহার করেছে। গোষ্ঠীটির সাবেক নেতা ও মুখপাত্রকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে।
মাজার-ই-শরীফ শহরের একটি শিয়া মসজিদে প্রথম বিস্ফোরণটি হয়। এতে অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন, আহত ৮৭ জন।
ইসলামিক স্টেস্ট (আইএস) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তালিবান বলছে, তারা আইএসকে পরাজিত করেছে। কিন্তু গোষ্ঠীটি আফগানিস্তানের নতুন শাসকদের কাছে একটি গুরুতর নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আইএস বলছে, মাজার-ই-শরীফ মসজিদে হামলায় তারা রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিস্ফোরিত বুবি-ট্র্যাপড ব্যাগ ব্যবহার করেছে। গোষ্ঠীটির সাবেক নেতা ও মুখপাত্রকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে।
দ্বিতীয় হামলাটি হয় কুন্দুজের একটি পুলিশ স্টেশনের কাছে। গাড়িতে রাখা বোমার বিস্ফোরণে অন্তত চার জন প্রাণ হারান। আহত হয়েছেন ১৮ জন।
পূর্ব নাঙ্গারহার প্রদেশের একটি রাস্তায় হয় তৃতীয় হামলা। তালিবানের গাড়িতে মাইন বিস্ফোরণে নিহত হন চার জন। একজনের অবস্থা গুরুতর।
এ ছাড়া রাজধানী কাবুলের নিয়াজ বেইক এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে দুই শিশু আহত হয়েছে।
কাবুলের শিয়া অধ্যুষিত দাশত-ই-বার্চি এলাকার আব্দুল রহিম হাই স্কুলে দুই দিন আগে বোমা হামলা হয়। এতে ছয়জন নিহত এবং ২০ জনের বেশি আহত হন। এর দায় নেয়নি আইএস।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আইএস-কে যাত্রা শুরু করে। বিবিসি বলছে, সেই সময় আইএসের রমরমা সময় যাচ্ছিল। কারণ, এর আগে ২০১৪ সালে সিরিয়া ও ইরাকের এলাকা দখল করে তথাকথিত ‘খেলাফত’ ঘোষণা করেছিল আইএস।
ফোর্বস বলছে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের তালিবানের সদস্যদের নিয়ে আইএস-কে গঠিত হয়েছিল। এই সদস্যরা মনে করেছিল, তালিবান যথেষ্ট পরিমাণে শক্তিশালী নয় বা তাদের সেই ‘তথাকথিত আদর্শ’ বাস্তবায়নে যথেষ্ট কঠোর নয় তালিবান।
বলা হয়ে থাকে আফগানিস্তানের নানগাহার প্রদেশে আইএস-কে–এর বিচরণ। এ ছাড়া দেশটির উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় তাদের ঘাঁটি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসিসের ফেলো বিল রোজিও ফোর্বসকে বলেন, এসব এলাকায় নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে তালিবান ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক বাহিনীর ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় তাদের। তবে সে লড়াই চালিয়ে সফল হয়েছিল আইএস-কে।
এসব এলাকার বাইরেও তাদের বিচরণ রয়েছে। আফগানিস্তানের দক্ষিণ অঞ্চলের কিছু কিছু এলাকাতেও তাদের উপস্থিতি রয়েছে। এর আগেও আইএস-কে কাবুলে হামলা চালিয়েছে। ২০২০ সালের মে মাসে কাবুলের হাসপাতালে হামলা চালিয়েছিল তারা। এ ছাড়া চলতি বছরের মে মাসে কাবুলে মেয়েদের একটি স্কুলে হামলা চালিয়েছিল আইএস-কে। দুই হামলাতেই বেশ কয়েকজন মারা গিয়েছিল। বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, নানগাহার ছাড়াও আইএস-কে-এর ঘাঁটি রয়েছে আফগানিস্তানের কুনার ও নুরিস্তান প্রদেশে।
বিবিসি বলছে, আফগানিস্তানে যেসব জঙ্গিগোষ্ঠী এখন সক্রিয় রয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস এই আইএস-কে। স্কুলগামী মেয়েশিশু, হাসপাতাল, এমনকি হাসপাতালের প্রসূতি ইউনিটে হামলা চালিয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীদেরও হত্যা করেছে আইএসের এই শাখার জঙ্গিরা।
বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, তাদের স্লিপার সেল রয়েছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে। এই বার্তা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে মসজিদ-মাজারে হামলা চালিয়েছে আইএস-কে। মুসলমানদের মধ্যে যারা সুন্নি নয়, তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায় এই সংগঠনটি।
তবে বিভিন্ন এলাকায় আইএস-কে নৃশংস হামলা চালালেও খুব বেশি এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। এরপর নিজেদের হামলার ধরন বদলে ফেলে আইএস-এর এই শাখা। বিভিন্ন শহর বা এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় আইএস-কের জঙ্গিরা ঘাপটি মেরে থাকে। এরপর তারা পরিচিত ব্যক্তিদের ওপর হামলা চালিয়ে থাকে।
বিবিসি বলছে, যখন আইএস-কে-এর রমরমা অবস্থা ছিল, তখন তাদের জঙ্গির সংখ্যা ছিল ৩ হাজারের মতো। আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনী, যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী ও তালিবানের হামলায় তাদের অনেক সদস্য মারা গেছে। ফলে তাদের সদস্যসংখ্যা কমেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেল ফর আফগানিস্তান রিকনস্ট্রাকশন জাতিসংঘকে গত বছরের জুনে বলেছিল, আইএস-কে শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করছে। এ জন্য তারা তালিবান ও অন্যান্য সংগঠন থেকে সদস্য সংগ্রহ করছে। তবে এই পদক্ষেপ সফলতা পায়নি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এএফপি বলছে, আইএস-কে নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে গত মাসে। তাতে বলা হয়েছে, তাদের সদস্যসংখ্যা এখন পাঁচ শর কাছাকাছি।
এদিকে ফোর্বসের হিসাব বলছে, তালিবানের তুলনায় আকারে অনেক ছোট আইএস-কে। তাদের সদস্যসংখ্যা পনেরো শ থেকে দুই হাজারের মধ্যে। কিন্তু এর তুলনায় তালিবানের সংখ্যা অনেক বেশি। মার্কিন সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, তালিবানের সদস্যসংখ্যা ৭৫ হাজারের বেশি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮০৫
আপনার মতামত জানানঃ