ছাত্রলীগ এখন কেবল ছাত্রসমাজের কাছে এখন আতঙ্কের নাম নয়, গোটা দেশের নিকট আতঙ্কের নাম। হত্যা ছাড়াও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অপহরণ, নির্যাতন, এমনকি ধর্ষণসহ আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে৷ এবার গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়া এক ধর্ষককে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মাদ্রাজ ইউনিয়নে ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় নুরুল হক মাঝি নামে এক ধর্ষককে আটক করে গ্রামবাসী। পরে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক ধর্ষককে ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাতে মাদ্রাজ ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ বাদী হয়ে নুরুল হক মাঝিকে আসামি করে চরফ্যাশন থানায় একটি মামলা করেন। অভিযুক্ত নুরুল হক ওই ইউনিয়নের চর নাজিম উদ্দিন গ্রামের মৃত সুরা রাঢ়ির ছেলে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওই গৃহবধূর স্বামী খুলনায় কর্মস্থলে থাকায় এক সন্তান নিয়ে তিনি একা বাড়িতে থাকতেন। এই সুযোগে প্রতিবেশী যুবক নুরুল হক মাঝি প্রায় সময় তাকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। তার প্রস্তাবে সাড়া না দিলে মঙ্গলবার রাত ৮টায় তারাবির নামাজ শেষে বসতঘরের দরজা খোলা রেখে ঘরে শুয়েছিলেন। এ সময় অভিযুক্ত নুরুল হক মাঝি তার ঘরে প্রবেশ করে। তাকে মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। গৃহবধূর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গৃহবধূর চিৎকারে আমরা ছুটে এসে অভিযুক্ত নুরুলকে হাতেনাতে আটক করি। গণপিটুনি দিয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ আসার আগেই গ্রামবাসীর কাছ থেকে মাদ্রাজ ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক রাসেল তাকে জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। চরফ্যাশন থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও অভিযুক্ত যুবককে আটক করতে পারেনি।
মাদ্রাজ ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি আজাদ বলেন, খবর শুনে আমার ঘটনাস্থলে যাই। কিন্তু ধর্ষককে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি সঠিক নয়।
চরফ্যাশন থানার উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম জানান, রাতে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে গ্রামবাসীর হাতে আটক যুবককে পাওয়া যায়নি।
চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন মিয়া বলেন, এ ঘটনায় গৃহবধূ বাদী হয়ে অভিযুক্ত নুরুল হক মাঝিকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। তাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একের পর এক সংঘর্ষ ও খুনের ঘটনাসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য বারবার আলোচনায় আসে ছাত্রলীগ। মাদক ব্যবসা, টেন্ডার-বাণিজ্য, পুলিশকে মারধরসহ একের পর এক নানা অভিযোগ উঠেছে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগ যে আদর্শ ও নীতিতে একটি সংগঠনে রুপ নিয়েছিল সেই আদর্শ এখন আর নেই। বিশ্লেষকরা বলেছেন, আদর্শের চর্চা না থাকার ফলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারা দুর্নীতিসহ নানান অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।
তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগের এই সর্বগ্রাসী নতুন রাজনৈতিক আদর্শ ও ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে যাকে পারো তাকে ধরো, আওয়ামী লীগ করো নীতিতে চলতে গিয়ে ছাত্রলীগ আর আগের মতো আদর্শিক ছাত্রলীগ হতে পারছে না। তারা মনে করেন, ছাত্রলীগ এখন আর ছাত্রলীগের সঙ্গে আদর্শিকভাবে নেই। তারা কোনো ভাই বা সিন্ডিকেটের রাজনীতি করছে। তাদের ভাষ্যমতে, সিন্ডিকেট হলো তারাই, যারা ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে অর্থ, সম্পদ, বিত্ত, বৈভব বানিয়েছে। আর ছাত্রলীগও তাদের ব্যবহার করে ধান্দার রাজনীতি করছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য দিনদিন চাউর হয়ে উঠছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার চূড়ান্তে বসবাস করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহবোধ না করায় তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে চলেছে। ছাত্রলীগের এই আইনের উর্ধে চলে যাওয়ার পেছনে অবশ্য রাজনৈতিক নেতা কুৎসিত হাতের ভূমিকা রয়েছে। তারা বলেন, ছাত্রলীগ সংগঠনটির ছাত্রদের ধীরে ধীরে উগ্র এবং একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে রুপদানের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের অনৈতিক মদদ ও উস্কানি। এ বিষয়ে প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৪
আপনার মতামত জানানঃ