মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগে এলডিপি সভাপতি অলি আহমদের লেখা ‘রেভোলিউশন, মিলিটারি পারসোনেল অ্যান্ড দ্য ওয়ার অব লিবারেশন ইন বাংলাদেশ’ বইটি নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এক সময়ের বিএনপি নেতা অলির ওই বইতে সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকে ‘দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। তার লেখা অন্য যেসব বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে, সেগুলোও নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত করতে বলেছে আদালত। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়কে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অলি আহমদের একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করায় নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন সাংবাদিক কনক সরওয়ার। গত ১৭ অগাস্ট তার ইউটিউব চ্যানেল ও ফেইসবুক লাইভে অলি আহমদের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। ওই সাক্ষাৎকারসহ বিদেশে থাকা কনক সরওয়ারের ‘দেশবিরোধী’ সব ভিডিও কনটেন্ট ‘নিষিদ্ধ, বন্ধ, অকার্যকর ও অপসারণ’ করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কনক সরওয়ারকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারেও জিয়াউর রহমানকে ‘দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন অলি।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাই কোর্ট বেঞ্চ ৮ ডিসেম্বর ২০২০, গতকাল মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেয়। আদালতে রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। খবর বিডিনিউজ।
কনক সরওয়ারের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেইসবুক লাইভে অলি আহমদের দেওয়া ওই সাক্ষাতকার নিষিদ্ধ, বন্ধ, অকার্যকর ও অপসারণ করতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। সেই সঙ্গে ‘সংবিধানের ঘোষণাপত্রের সাথে সাংঘর্ষিক ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে’ অলির লেখা ‘রেভোলিউশন, মিলিটারি পারসোনেল অ্যান্ড দ্য ওয়ার অব লিবারেশন ইন বাংলাদেশ’ বইটি বাজেয়াপ্ত করতে এবং তার বিরুদ্ধে ‘যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা’ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
আইনজীবী মঞ্জুরুল হক বলেন, “অলি আহমদ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করেছেন। ভবিষ্যত প্রজন্ম এই বই পড়ে বা সাক্ষাতকারটি শুনে বিভ্রান্ত হবে। শুধু তাই না, তার বক্তব্য এবং লেখা আমাদের সংবিধানের ঘোষণাপত্রও লঙ্ঘন করেছে। ফলে আদালত রুলসহ অন্তবর্তী আদেশ দিয়েছে।”
ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এনে গত ৭ সেপ্টেম্বর অলি আহমদকে উকিল নোটিস দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ আসিফ। সেখানে অলি আহমদকে সাক্ষাতকারের ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়েছিল। ২০ সেপ্টেম্বর সেই নোটিসের জবাব দেন অলি।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী আসিফ বলেন, “অলি আহমদ নোটিসের জবাব দিলেও তার বক্তব্যে অনড় থাকেন। এমনকি ওই বইয়েও তিনি এ কথা লিখেছেন বলে জবাবে উল্লেখ করেন। এরপর তার জবাব যুক্ত করে গত ২২ নভেম্বর রিট আবেদনটি করি।”
সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে ১৯৭৮ সালে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের গড়ে তোলা বিএনপিতে যোগ দেন অলি আহমদ। সর্বশেষ বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে থাকা অলি দুই দফায় খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। ২০০৬ সালে বিএনপি ছেড়ে আরেক সাবেক বিএনপি নেতা এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে মিলে এলডিপি গঠন করেন অলি আহমদ। পরে মতবিরোধ দেখা দিলে বদরুদ্দোজা তার পুরনো দল ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ পুনরুজ্জীবিত করে নিজের নেতৃত্বাধীন এলডিপির নাম বদলে ফেলেন। ২০০৮ সালে অলির নেতৃত্বাধীন এলডিপি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়।
এসডাব্লিউ/এমএন/আরা/১৫০০
আপনার মতামত জানানঃ