উপনিবেশের মধ্যে শাসক দেশের সেনাদের প্রশিক্ষণ চলছে। রাইফেলের নিশানায় দাঁড়িয়ে আছেন একজন পরাধীন মানুষ। রাইফেলের গুলি লক্ষ্যে পৌঁছলে নির্ঘাৎ মৃত্যু। আর লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও গুরুতর আহত হবেন, সন্দেহ নেই। চিকিৎসার অভাবে পরিণতি সেই মৃত্যু।
মাত্র ৮ দশক আগেই এমন ঘটনা ঘটেছে। আর ঔপনিবেশিক দেশটি এখানে ইউরোপের কোনো দেশ নয়। দেশটির নাম জাপান। চিন, কোরিয়া, এবং ফিলিপাইন্সের দেশগুলির উপর এভাবেই এক দশকের বেশি সময় ধরে অত্যাচার চালিয়েছে জাপান।
ইতিহাসবিদদের মতে, জাপানের এই বিভৎসতা নাৎসি জার্মানিকেও লজ্জায় ফেলে দেয়। আর এই এক দশকে ইউরোপীয় হলোকাস্টের প্রায় দ্বিগুণ মানুষকে হত্যা করেছে জাপানের সেনারা।
গতবছরই চীন সরকার জানিয়েছিল, স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে চীন-জাপান যুদ্ধের ইতিহাস নতুন করে লেখা হবে। কোনো কারণে সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু ঐতিহাসিকদের গবেষণায় উঠে আসছে নতুন নতুন তথ্য।
প্রচলিত ইতিহাসে বলা হয়, যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ১৯৩৭ সালে। তবে প্রকৃতপক্ষে ১৯৩১ সালে জাপান মাঞ্চুরিয়া দখল করলে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় যুদ্ধের বিবীভৎসতাও। চীনের প্রতিটা মানুষ তখন জাপানের ক্রীতদাস। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রসংঘ তৈরি হয়ে গেলেও জাপান তার মধ্যযুগীয় শাসন ছেড়ে বেরিয়ে আসেনি।
জাপান উপনিবেশের সবচেয়ে অন্ধকার দিকটি অবশ্যই ‘কম্ফোর্ট কলোনি’। সমগ্র উপনিবেশ জুড়ে তৈরি হয়েছিল ২ হাজার ‘কম্ফোর্ট কলোনি’। এগুলি ছিল জাপান সেনাদের বিশ্রামকেন্দ্র। তবে আরও নিখুঁতভাবে বলতে গেলে, এগুলি ছিল যৌনপল্লী। পরাধীন মহিলাদের নিয়ে এসে বন্দি করা হত যৌন ক্রীতদাসী হিসাবে।
একটি সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, মোট ২ লক্ষ কোরিয়ান ও ফিলিপাইন মহিলাকে ধর্ষণ করেছে জাপ সেনারা। আর চীনের অবস্থা! ইতিহাস সঠিক তথ্য দিতে পারে না। তবে সেই সংখ্যাটা যে কোরিয়া ও ফিলিপাইনের মোট সংখ্যার তিনগুণের বেশি, তাতে সন্দেহ নেই।
তবে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ শুরু হল ১৯৩৭ সালেই। প্রবল পরাক্রমে চীনের ভিতর প্রবেশ করতে শুরু করল জাপ বাহিনী। ইউরোপে তখনও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়নি। হাজার হাজার চৈনিক নাগরিককে পরপর হত্যা করতে শুরু করল জাপানি সেনা।
কোথাও কোথাও গণসমাধি থেকে ৫০ হাজার মানুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মাত্র ৬ সপ্তাহে চিনের বিস্তীর্ণ অংশ দখল করে নিয়েছিল জাপান। আর এই ৬ সপ্তাহের মধ্যে হত্যা করা হয়েছিল অন্তত ৩ লক্ষ মানুষকে।
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের আগে পর্যন্ত সামরিক শাসন বজায় রেখেছিল জাপান। তবে এই ১৪ বছরে কত লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তার কোনো হিসাব নেই।
কেউ বলেন ৮ মিলিয়ন, কারোর হিসাব ১০ মিলিয়ন। ইউরোপের হলোকাস্টে নাৎসি আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৬ মিলিয়ন ইহুদি। তার থেকেও বড়ো গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে এশিয়ার বুকেই। তবে তার ইতিহাস এখনও অজানা অন্ধকারে ঢাকা।
এসডব্লিউ/এসএস/২১২৫
আপনার মতামত জানানঃ