আগামীকাল ২০ মার্চ বিশ্ব সুখ দিবস। এ দিবসকে সামনে রেখে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সমাধান নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এ বছর জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ নির্বাচিত হয়েছে ফিনল্যান্ড। অন্যদিকে আফগানিস্তানকে বিশ্বের সবচেয়ে কম সুখের দেশ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এই তালিকায়।
গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের ২০২২ সালের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
বিশ্বের সুখী দেশের র্যাঙ্কিংয়ে সাত ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছর জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে ১৪৬টি দেশের তালিকায় ৯৪ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছরের প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০১। এবারের তালিকায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থান ১৩৬ এবং পাকিস্তান ১২১ নম্বরে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র আছে ১৬তম স্থানে। আর যুক্তরাজ্যের অবস্থান ১৫। ফ্রান্সের অবস্থান ২০।
তালিকা অনুযায়ী শীর্ষ ১০টি সুখী দেশ হচ্ছে ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবার্গ, সুইডেন, নরওয়ে, ইসরায়েল ও নিউজিল্যান্ড।
সার্বিয়া, বুলগেরিয়া ও রোমানিয়া শারীরিক সুস্থতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে। সব মিলিয়ে সবচেয়ে বড় পতন হয়েছে লেবানন ও ভেনেজুয়েলার।
অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়া লেবানন সবচেয়ে কম সুখের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে গত আগস্টে তালিবান আবার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মানবিক সংকট গভীরতর হয়েছে।
বিশ্বের সুখী দেশের র্যাঙ্কিংয়ে সাত ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছর জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে ১৪৬টি দেশের তালিকায় ৯৪ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ।
সুখী দেশের তালিকা করার ক্ষেত্রে মানুষের সুখের নিজস্ব মূল্যায়ন, সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে শূন্য থেকে ১০ সূচকে নম্বর পরিমাপ করা হয়। পাশাপাশি প্রতিটি দেশের মানুষের ব্যক্তিগত সুস্থতার অনুভূতি, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, জিডিপি ও দুর্নীতির মাত্রা বিবেচনায় নেওয়া হয়।
এ বছর তালিকা প্রণয়নের জরিপ শেষ হয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে। তাই সুখী দেশের তালিকায় এর কোনো প্রভাব পড়েনি। ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২২-এ ইউক্রেন রয়েছে ৯৮তম এবং রাশিয়া ৮০তম স্থানে।
গতবারের চেয়ে তিন ধাপ এগিয়ে এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ১৬তম। তাদের আগে রয়েছে কানাডা ও পরে যুক্তরাজ্য।
করোনা মহামারিতে বদলে গেছে জীবনের সন্তুষ্টির ধারা। এই ভাইরাস বয়স্কদের করেছে উৎফুল্ল। আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকা সত্ত্বেও প্রবীণরা ছিলেন হাসিখুশি। তবে তরুণদের একটি কঠিন বছর পার করতে হয়েছে। তাদের অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে কয়েকটি ধনী দেশের নারীদেরকে। এবারের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গত বছরের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেয় তালিবান। এরপর তারা নতুন সরকার গঠন করলেও এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে দেশটি। দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট।
হাহাকার চলছে দেশটিতে। খাবারের জন্য হন্যে হয়ে ছুটছে মানুষ। তালিবান ক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামনের দিনগুলোতে ভয়ংকর বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে আফগানেরা। আর এসবের চোট সবচেয়ে বেশি পড়েছে শিশুদের ওপর।
মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আফগানিস্তানের অভুক্ত শিশুরা। তাদেরকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। অথচ তারাও দীর্ঘদিন ধরে কোনো বেতন পাচ্ছেন না। নিজের সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তবু তারা আবার ছুটে যাচ্ছেন হাসপাতালে। প্রাণপ্রদীপ নিভে যাওয়ার আগে চেষ্টা করছেন মা-বাবার মুখে হাসি ফেরাতে। এমন এক মানবিক বিপর্যয়ের আফগানিস্তান। পরিস্থিতি ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠছে।
আফগানিস্তানে ভয়াবহ অপুষ্টির শিকার শিশুরা। হাসপাতালগুলো শিশুদের চিৎকার আর কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে। লস্কর গাহ শহরের প্রধান হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রুমে কয়েক সেকেন্ড পর পরই একজন করে অসুস্থ শিশুকে নিয়ে আসা হচ্ছে। তীব্র খাদ্য সংকটে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে এসব শিশুকে। খাবারের অভাবে তাদের বাঁচিয়ে রাখাটাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই নিরীহ মানুষগুলোকে দেখা কেউ নেই। সারাবিশ্বই যেন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। খাদ্যের অভাবে মরতে বসা এসব মানুষ বিশ্বের কোনো সহায়তাই পাচ্ছে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৪৬
আপনার মতামত জানানঃ