ইউক্রেন রুশ যুদ্ধ ঘিরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে বিশ্বজুড়ে। তারই মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরে নতুন করে উত্তেজনা বাধাল বেইজিং। ভিয়েতনামের উপকূলে নতুন করে নৌযুদ্ধের মহড়া শুরু করার কথা শনিবার ঘোষণা করেছে চীনের ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’ (পিএলএ)।
পাশপাশি উত্তাপকে আরও এক ধাপ চড়িয়ে ওই এলাকায় বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বন্ধের ফরমানও জারি করা হয়েছে।
ভিয়েতনাম সরকার সূত্রের খবর, চীনের হেনান প্রদেশের সানিয়া নৌঁঘাটিতে মোতায়েন বাহিনী এই নৌ-মহড়ায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে।
বিতর্কিত ওই জলপথের উপর চীনা ফৌজ কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করেছে বলেও আগেই খবর মিলেছিল। তবে হেনানের ‘মেরিটাইম সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ একে ‘রুটিন অনুশীলন’ বলে জানিয়ে বলেছে, আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত চলবে ওই নৌ-মহড়া।
দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে চীনের বিরোধ নতুন নয়। এর আগেও ওই এলাকায় এমন একতরফা পদক্ষেপ করেছে চীন। তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই অসন্তোষ জানিয়ে আসছে ওই সাগরের আশপাশে থাকা দেশগুলি।
আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দেশগুলির অভিযোগ, ওই সাগরকে নিজেদের ‘সাম্রাজ্য’ হিসাবে ব্যবহার করছে বেইজিং।
চীনা নৌবাহিনীর মহড়ার স্থান ভিয়েতনাম উপকূলের হুয়ে শহর ২০০ নটিক্যাল মাইল দূরে। চীনা সামরিক তৎপরতা নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভিয়েতনাম সরকার।
নিজেদের অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে চীনা নৌসেনার এই মহড়াকে ‘ভিয়েতনামের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন’ বলে অভিযোগ তুলেছে সে দেশের সংবাদমাধ্যম।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জের সর্ববৃহৎ দ্বীপ উডি আইল্যান্ডে চীনা ফৌজের যুদ্ধবিমান মোতায়েনের জেরে বেইজিং-হ্যানয় উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল।
তার আগে ২০১৪ সালে চীনের একটি খনিজ উত্তোলনকারী জাহাজ ভিয়েতনামের জলসীমায় ঢুকে খনন শুরু করায় দু’দেশের মধ্যে সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমাদের দেশের বর্তমান নেতাদের দুর্বলতার কারণে ইউক্রেনের উপর হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এ বার চীন একই ভাবে তাইওয়ানের দখল নেবে।
দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে এশিয়ার কয়েকটি দেশ বহুবছর ধরেই বিবাদে লিপ্ত। মূল বিবদমান পক্ষের একদিকে রয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন। ও অন্যদিকে রয়েছে ভিয়েতনাম, তাইওয়ান ও ফিলিপিন্সের মতো দেশ। চীন এই দেশগুলিকে বঞ্চিত করে দক্ষিণ চীন সাগরের দখল নিজের হাতে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে।
ওই এলাকায় নৌবাহিনী পাঠিয়ে, যুদ্ধ জাহাজের মহড়া দিয়ে বারবার এই এলাকা নিজেদের বলে দাবি করছে। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ চীন সাগরে বালির প্রাচীর তৈরি করে দ্বীপ বানিয়ে সেখানে আধিপত্য স্থাপন করতে চাইছে। যাতে বাধা দিয়েছে বাকী পড়শি দেশগুলি। এবং তাদের সমর্থন করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ। ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্সদের সামরিক সাহায্য করছে আমেরিকা।
এই দক্ষিণ চীন সাগরের উপর দিয়ে বিশ্বের মোট জাহাজের এক-তৃতীয়াংশ চলাচল করে। সাগরের নিচে তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস সহ প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডারে পরিপূর্ণ।
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস (সিএফআর) এর মতে দক্ষিণ চীন সাগর বিরোধের কারণ— এর নিচে থাকা ১১ বিলিয়ন ব্যারেল তেল ও ১৯০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে উদ্ভূত হয়েছে। প্রাকৃতিক এই সম্পদের দাবিদার এই অঞ্চলের দেশ ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, তাইওয়ান ও ভিয়েতনাম, যা চীন অস্বীকার করছে।
বছরে দক্ষিণ চীন সাগরের মধ্য দিয়ে আনুমানিক ৩.৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার বৈশ্বিক বাণিজ্য হয়, যা বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্যের এক তৃতীয়াংশ।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৫০
আপনার মতামত জানানঃ