নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় বিমা কোম্পানিতে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে যুবলীগ নেতা ফুয়াদ আল মতিনের বিরুদ্ধে এক তরুণীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাকরির প্রলোভনে তরুণীকে অচেতন করে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা ফুয়াদ আল মতিনের বিরুদ্ধে চাটখিল থানায় মামলা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের।
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা চাটখিল উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক এবং একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবু তারাব গ্রামের বাসিন্দা।
গতকাল রোববার রাতে ওই তরুণী বাদী হয়ে চাটখিল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
মামলার সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ওই তরুণীকে বিমা কোম্পানির কার্যালয়ে ডেকে নেন ফুয়াদ আল মতিন। এরপর ফুয়াদ ও তাঁর সহযোগী ওই তরুণীকে নাস্তা ও কোমল পানীয় খেতে দেন। কোমল পানীয় পান করার পর ওই নারীর পুরো শরীর ঝিমঝিম করতে থাকে এবং তিনি অনেকটাই শক্তিহারা হয়ে যান।
এরপর ফুয়াদ ও তাঁর সঙ্গে থাকা সহযোগী ওই তরুণীকে মারধর করেন এবং জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলেন। একপর্যায়ে ফুয়াদ ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন। এ সময় ফুয়াদের সহযোগী মোবাইলফোনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন। পরে স্থানীয় এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের সহায়তায় ওই নারী নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন।
ভুক্তভোগী বলেন, তিনি আগে ঢাকায় বসবাস করতেন। কিছুদিন আগে তিনি গ্রামে ফিরে আসেন। এরপর তিনি একটি চাকরির খোঁজ করেন। যুবলীগ নেতা ফুয়াদ তাকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। একপর্যায়ে গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সে আমাকে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে ডেকে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে ধর্ষণ করে। ওই সময় ফুয়াদের আরেক সহযোগী ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলফোনে ধারণ করে। শেষে সেও ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। একই সাথে তারা আমাকে বিষয়টি কাউকে জানালে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেয়। তারপর ঘটনাস্থল থেকে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় উঠিয়ে দিয়ে আমাকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য করে।
তরুণী জানান, নির্যাতনে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে একজন সিএনজি অটোরিকশাচালক তাকে সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করেন। নিরাপত্তার কারণে তিনি চাটখিল থানায় না গিয়ে জেলা সদরে সুধরাম থানায় যান। সেখানকার পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।
নির্যাতনে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে একজন সিএনজি অটোরিকশাচালক তাকে সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করেন। নিরাপত্তার কারণে তিনি চাটখিল থানায় না গিয়ে জেলা সদরে সুধরাম থানায় যান। সেখানকার পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাল্লাবাজার থেকে চাটখিল উপজেলা সদরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় সড়কের পাশের গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো ওই তরুণী তাকে ইশারা দিয়ে গাড়ি থামাতে বলেন। এরপর তরুণীর অনুরোধ অনুযায়ী তাকে জেলা শহরে নিয়ে আসেন। আসার সময় তরুণী তার ওপর নির্যাতনের কথা তাকে জানিয়েছেন।
চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, গতকাল রাতে ওই তরুণী নিজেই বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ফুয়াদ ও অজ্ঞাতনামা একজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলমান। ওই তরুণী বর্তমানে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার পর থেকে ফুয়াদ আল মতিন গা ঢাকা দিয়েছেন। তাই অভিযোগের বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসব ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এটা যে হঠাৎ করে হচ্ছে তা নয়। পর্যায়ক্রমে নিচে যেতে যেতে একটা গভীর সংকটে এসে আমরা দাঁড়িয়েছি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, সম্পদ বাড়ছে, কিন্তু মানুষের মানবিক গুণাবলি কমে যাচ্ছে। এখন আমাদের সামনে কোনো আদর্শ নাই। আদর্শহীনতা, নীতিহীনতা—এগুলো দ্বারা রাজনীতি দূষিত হয়ে গেছে। জাতীয় রাজনীতি যদি দূষণমুক্ত হতো তাহলে সরকারের নীতি ভিন্ন হতো।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য দিনদিন চাউর হয়ে উঠছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার চূড়ান্তে বসবাস করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহবোধ না করায় তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে চলেছে। সুবর্ণা ও তার পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০২৪
আপনার মতামত জানানঃ