
অঁরাদার-স্যুর-গ্লাঁ। ফ্রান্সের একটি শহর। কিন্তু অন্যান্য শহরের মতো ঝাঁ-চকচকে চেহারা তার নয়। বরং শহরে ঢুকলেই আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে অনেকগুলো লম্বা লম্বা কংক্রিটের মতো টুকরো। যা এককালে বাড়ি ছিল; যেখানে একটা সুন্দর সংসার ছিল। অঁরাদার শহর আজ মূলত এক ভৌতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। হিটলারের হুংকার আর নাৎজি সেনাদের আক্রমণ ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছিল। একসময় ফ্রান্সেও নেমে এল সেই আঘাত। হিটলারের আদেশে যেখানে যাকে পাওয়া গেল, সবাইকে হয় যুদ্ধবন্দি করে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হল, নয়তো সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করা হল। এর বাইরে আর কোনো রাস্তা নেই।
বিশ্বযুদ্ধের প্রায় শেষের দিকে নাৎজি বাহিনী যখন একটু একটু করে পেছনে সরছে, তখন তাদের চোখ পড়ল ফ্রান্সের এই নির্জন জনবসতির দিকে। তবে ঠিক কেন অঁরাদারই জার্মান নাৎজিদের লক্ষ্য হল, তার সঠিক কারণ জানা যায়নি আজও।
সাল ১৯৪৪, জুন মাসের ১০ তারিখ। দুপুরবেলা। নিয়তি যেন এই দিনটিকেই নির্দিষ্ট করে রেখেছিলেন অঁরাদারের জন্য। শহরের বাইরেও কেউ ছিলেন না। সর্বত্র নাৎজিদের কড়া নজরদারি। এমন সময় সেনা কর্তাদের নির্দেশে শহরের সমস্ত নাগরিককে বাইরে নিয়ে আসা হয়।
মহিলা আর শিশুদের আলাদা করে গির্জায় বন্ধ করে পাহারা দিয়ে রাখা হয়। আর পুরুষদের ছ’টা শস্যাগারে জড়ো করা হয়। তারপর? মেশিনগানের গুলি ঝাঁঝরা করে দেয় ওই মানুষগুলোর দেহ।
অদ্ভুতভাবে তার কিছুক্ষণ আগেও তারা হাসছিলেন; এমন পরিণতি যে ঘটতে পারে সেটা ভাবেনইনি! শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হননি সেনারা; দেহগুলোয় আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন তখনও জীবিত ছিলেন।
পুরুষদের তো হত্যা করা গেল, এবার বাকিরা? এবার একটু অন্য পন্থা নিল নাৎজিরা। একের পর এক গ্রেনেড বর্ষণ করে চার্চের ভেতরে বাইরে সব জায়গায় আগুন লাগিয়ে দিল। এদিকে ভেতরে আটকে পড়া মহিলা আর বাচ্চারা চেষ্টা করেও বেরোতে পারছে না। চার্চের দেওয়ালগুলোও ভাঙছে; সেইসঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। যারাই জানলা ভেঙে বা ফাঁক খুঁজে পালানোর চেষ্টা করেছে, সঙ্গে সঙ্গে গুলি!
দেখতে দেখতে সবটা শেষ হয়ে গেল চোখের সামনে। যাওয়ার আগে গোটা অঁরাদার শহরে আগুন লাগিয়ে গেল নাৎজি বাহিনী। শেষ হল ইউরোপের যুদ্ধ ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস গণহত্যা। পরে নাৎজি সেনারা রীতিমতো উৎসব করে এই হত্যাকাণ্ডের পর। এটাই নাকি ‘সাফল্য’!
কেউ কি বাঁচেনি সেই পরিস্থিতি থেকে? মাত্র ছয়জন মৃতের স্তূপ থেকে বেঁচে বেরিয়ে এসেছিলেন। পরে তাদের মুখ থেকেই বিস্তারিতভাবে জানা যায় গণহত্যার ঘটনা। আজও অঁরাদার-স্যুর-গ্লাঁ শহরে গেলে দেখা যাবে সেই বীভৎসতার চিহ্ন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৩০
আপনার মতামত জানানঃ