স্তন ক্যান্সার বলতে নারীর কথাই মাথায় আসে। তবে পুরুষরাও আক্রান্ত পারেন এই রোগে। নারীর তুলনায় পুরুষের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক কম হলেও, পুরুষের ক্ষেত্রে এই রোগের ভয়াবহতা অনেক বেশি।
সম্প্রতি সামাজিক ট্যাবু ভেঙে অনেকটাই সামনে এসেছে নারীর স্তন ক্যান্সারের বিষয়টি এবং এর চিকিৎসা। তবে নারীর তুলনায় পুরুষের এই ক্যান্সার হওয়ার হার এতটাই কম যে এখনও অবহেলাতেই থেকে গেছে পুরুষের স্তন ক্যান্সার রোগ। এই রোগ নিয়ে পুরুষদের মাঝে অতিরিক্ত অসচেতনতার কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগ ধরা পড়ে শেষ পর্যায়ে গিয়ে।
ক্লিনিক্যাল প্রমাণে দেখা গেছে, স্তন ক্যান্সারে ১ শতাংশেরও কম পুরুষ আক্রান্ত হন। তবে যারা আক্রান্ত হন, তাদের জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পুরুষের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম হলেও এর লক্ষণ ও উপসর্গ জেনে রাখা উচিত।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য মতে, বয়সের সঙ্গে সঙ্গেই পুরুষের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। বেশিরভাগ স্তন ক্যান্সারের রোগীই ৫০ বছর বয়সের পরে আক্রান্ত হন। এ কারণে নিয়মিত স্তন স্ক্রিনিং করা জরুরি। ফলে পুরুষদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করা সম্ভব।
পুরুষের স্তন ক্যান্সরের কারণ
স্তন ক্যান্সারও জেনেটিক মিউটেশনের ফলাফল হতে পারে। পরিবারের কেউ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে অন্যান্যদেরও হতে পারে।
বিশেষ করে যেসব পুরুষের শরীরে অস্বাভাবিক বিআরসিএ-১ বা বিআরসিএ-২ জিন আছে তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
শুধু জেনেটিক মিউটেশনই একমাত্র কারণ নয় বরং বিভিন্ন কারণে পুরুষরা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে।
বেশি বয়স, এস্ট্রোজেন এক্সপোজার কিংবা অতিরিক্ত এক্স ক্রোমোজোম নিয়ে জন্মগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রেও এই রোগ হতে পারে।
লিভারের রোগ, স্থুলতা এবং পরিশ্রমহীনতাও পুরুষের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
পুরুষের স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ
পুরুষদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের অনেক লক্ষণ প্রকাশ পায়। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির (এসিএস) তথ্য অনুসারে, পুরুষদের স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক ৪ লক্ষণ অবহেলা করলেই বিপদ হতে পারে।
- স্তনে ব্যথাহীন কোনো পিণ্ড দেখা দেওয়া।
- স্তনের নিপল দিয়ে তরল পদার্থ বের হওয়া।
- স্তনের আশেপাশে গর্তের মতো হওয়া।
- স্তন বা স্তনের ত্বক বিবর্ণ হয়ে যাওয়া।
এই লক্ষণগুলো স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক সতর্কীকরণ উপসর্গ হতে পারে। এ ছাড়াও লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া, স্তনে ব্যথা ও হাড়ের ব্যথাও এই ক্যান্সারের গুরুতর লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়।
পুরুষের স্তন ক্যান্সারের ধরন
সিডিসি’র তথ্য অনুসারে, পুরুষরা ৩ ধরনের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন।
ইনভেসিভ ডাক্টাল কার্সিনোমা: এই ধরনের স্তন ক্যান্সার নালীতে শুরু হয়। তারপর নালীর বাইরে স্তনের টিস্যুর অন্যান্য অংশে বৃদ্ধি পায়।
ইনভেসিভ লোবুলার কার্সিনোমা: ক্যান্সার কোষগুলো লোবুলে শুরু হয়। তারপরে স্তনের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে।
ডাক্টাল কার্সিনোমা ইন সিটু: মারাত্মক ধরনের স্তন ক্যান্সার এটি। এক্ষেত্রে নালীগুলোর আস্তরণে ক্যান্সার বাসা বাঁধলেও, অন্যান্য স্তন টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে না।
ম্যামোগ্রাম, আল্ট্রাসাউন্ড, স্তনের স্রাব পরীক্ষা বা বায়োপসি করলেই এই ৩ ধরনের ক্যান্সার সনাক্ত করা সম্ভব।
রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা
সব বয়সের পুরুষ স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগ চিকিৎসার জন্য আগে ক্যানসার কোষ শনাক্ত হওয়া প্রয়োজন। বায়োপসি করে টিস্যু নমুনার মাধ্যমে তা শনাক্ত করা যায়।
এ ছাড়া পুরুষ নিজে স্তন ও স্তনবৃন্ত পরীক্ষা করে এবং মেমোগ্রাফ ও আলট্রাসাউন্ড পদ্ধতিতেও স্তন ক্যানসার ধরতে পারে।
এই রোগের চিকিৎসার জন্য ক্যানসার কোন স্তরে রয়েছে এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করতে হয়। প্রাথমিক অবস্থায় পুরুষের স্তন ক্যানসার শনাক্ত করা গেলে তা অস্ত্রোপচার করে চিকিৎসা করা হয়। এ ছাড়াও রেডিয়েশন থেরাপি ব্যবহার করে অস্ত্রোপচারের পর ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে ফেলা হয়।
অথবা অস্ত্রোপচারের আগে টিউমারের আকার কমাতে রেডিয়েশন থেরাপি দেওয়া হয়। এ ছাড়াও সিসটেমিক থেরাপি হিসেবে অ্যান্টি-ক্যানসার ওষুধ ইনজেকশন বা খাওয়ানো হয়। সিসটেমিক থেরাপির মধ্যে রয়েছে বায়োলজিক থেরাপি, কেমোথেরাপি ও হরমোন থেরাপি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩১০
আপনার মতামত জানানঃ