আর ১০টা গ্রামের মতোই কোলাহল আর ব্যস্ততার কমতি ছিল না সেখানে। তবে সে প্রায় ৩০ বছর আগের কথা। কিন্তু এখন এর চিত্র ভিন্ন। রীতিমতো ভুতূড়ে রূপ ধারণ করেছে গ্রামটি। বলা হচ্ছে স্পেনের উত্তর-পশ্চিম গ্যালিসিয়া অঞ্চলের অ্যাসেরেডো গ্রামের কথা। গ্রামটির অবস্থান পর্তুগাল সীমান্তের কাছে।
সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল, পরিস্থিতি বদলে যায় ১৯৯২ সালে। সে বছর ওই এলাকায় অল্টো লিন্ডোসো নামের একটি জলাধার তৈরি করা হয়। এ কারণে পানিতে তলিয়ে যায় পুরো গ্রাম। এরপর থেকেই সেটি ছিল চোখের আড়ালে।
সূত্র মতে, অ্যাসেরেডো গ্রামটি পর্তুগালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকার মধ্যে পড়ত। অতিরিক্ত জল ছাড়ার জেরে হঠাৎ করে স্থানীয় লিমিয়া নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বন্যার জলে ভেসে যায় আশপাশের এলাকা। লিন্ডোসো জলাধারের মুখে অবস্থিত অ্যাসরেডো গ্রামটিও এই বন্যার কারণে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় প্রশাসন গ্রামের লোকজনকে অন্য জায়গায় সরে যেতে আবেদন করলেও তারা রাজি হননি। পরে তাদের গ্রাম থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়। গ্রামের শত শত মানুষ দেশান্তরী হতে বাধ্য হন। তখন থেকে অ্যাসেরেডো গ্রামটি জলের নিচে আছে। বর্তমানে লিন্ডোসো জলাধারে জলের স্তর খুব কম হয়ে গিয়েছে।
দীর্ঘ তিন যুগ পরে কীভাবে আবার সামনে এল অ্যাসেরেডো? উত্তরটি হচ্ছে, খরা। অনাবৃষ্টিতে তীব্র খরার শিকার এ অঞ্চল। জলাধারের পানি কমে নেমে এসেছে ১৫ শতাংশে। ফলে আবারও জেগে উঠেছে তলিয়ে থাকা গ্রামটি।
তবে অ্যাসেরেডো গ্রামের আর আগের রূপ নেই। দীর্ঘ সময় পানির নিচে থাকায় এর বাড়িগুলোর ছাদ ধসে পড়েছে। বাড়ির দেয়াল আর দরজা-জানালাগুলোর অবস্থাও খারাপ। ঝরনাগুলো রয়েছে, তবে মরিচা ধরে বেহাল।
গ্রামের কিছু ঘরে রয়েছে বিয়ারের খালি বোতলের সারি। বুঝতে বাকি থাকে না, এককালে সেখানে ছিল পানশালা। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে মরিচা ধরা একটি পুরোনো গাড়িও। যেন হলিউডের ভুতুড়ে ছবির একটি দৃশ্য।
গ্রামটি ঘুরে দেখতে এসেছেন ৬৫ বছর বয়সী ম্যাক্সিমিনো পেরেজ রোমিও। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে আমি যেন সিনেমা দেখছি। আমার খুবই খারাপ লাগছে। আমি ভয় পাচ্ছি, সামনের বছরগুলোতে খরা ও জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে আরও কী ঘটবে।’
স্পেনের বৃহত্তর লোবিওস নগরের ভেতরেই পড়েছে অ্যাসেরেডো গ্রামটি। লোবিওস কাউন্সিলের মেয়র মারিয়া দেল কারমেন ইয়ানেজ বলেন, গত কয়েক মাসে বৃষ্টির অভাবেই খরা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে জানুয়ারিতে পরিস্থিতি ছিল সবচেয়ে সংকটের।
পাশাপাশি জলাধারের পানি শুকিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিবেশী দেশ পর্তুগালের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইডিপিকে দায়ী করেছেন মেয়র।
চলতি মাসের শুরুতে পর্তুগাল সরকার অল্টো লিন্ডোসোসহ পাঁচটি জলাধারকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কৃষিকাজের জন্য পানি ব্যবহারের নির্দেশ দেয়। কারণ, খরার কারণে পানির অন্য উৎসগুলোও সংকটের মুখে পড়েছে। এতে করে জলাধারগুলোতে পানি আরও কমে যায়।
স্পেনের পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলছে, দেশটির জলাধারগুলোতে পানি রয়েছে ৪৪ শতাংশ। এক দশক আগে সেগুলোতে পানি ছিল প্রায় ৬১ শতাংশ।
তবে সামনে চলমান খরা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে জলাধারগুলোতে পানি আরও কমতে পারে।
এদিকে গ্রামের এ অবস্থা দেখে লোবিওসের একজন সাবেক নির্মাণকর্মী জোসে আলভারেজ অ্যাসেরেডোতে তার কর্মদিবসের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘এ দৃশ্য ভয়ানক, কিন্তু এটাই জীবন। কেউ মরে আবার কেউ বাঁচে।’
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৩০
আপনার মতামত জানানঃ