প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি জালিয়াতির মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তেও অবহেলার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তদন্তে ও আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ ঘটনায় সম্পৃক্ত যে ক’জনের নাম উঠে আসে তার দু’জনকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশ। আসামিদের কয়েকজন জামিনের আবেদন করলে নথি পর্যালোচনায় বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আসে। হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এখন মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন রোববার আদালতে ওই আবেদন করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশেক ঈমাম তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এ বিষয়ে শুনানির জন্য ১৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন। আবেদনে কামাল উদ্দিন লিখেছেন: ‘হাইকোর্টের আদেশপ্রাপ্ত হয়ে জানতে পারি, ঘটনার তদন্ত ও আসামিদের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শাহজাহান ও রবিউল আউয়ালের নাম এলেও চার্জশিটে তাদের আসামি করা হয়নি। বিষয়টি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী এবং আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ‘টিক চিহ্ন’ জাল করার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (০৭) মোহাম্মদ রফিকুল আলম ৫ মে তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহায়ক ফাতেমা খাতুনসহ তিনজনকে আসামি করেছিলেন তিনি। এজাহারে বলা হয়: নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবটি ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। শাখা ৭-এ কর্মরত অফিস সহায়ক ফাতেমা সারসংক্ষেপটি শাখায় পাওয়ার পর টেলিফোনে তরিকুলকে জানান যে, ‘এয়ার কমোডর (অব.) এম আবদুস সামাদ আজাদকে অনুমোদন দেয়া হয়নি। প্রফেসর ড. এম এমদাদুল হককে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’ তখন তরিকুল ওই অনুমোদনের সারসংক্ষেপ আরেক আসামি ফরহাদের কাছে দেয়ার জন্য ফাতেমাকে বলেন। ফাতেমা অসৎ উদ্দেশ্যে প্যাকেটটি গ্রহণ ও বিতরণ শাখায় না দিয়ে ১ মার্চ দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ৪ নম্বর গেটের বাইরে আসামি ফরহাদের হাতে তুলে দেন। এর আগে ফাতেমা তরিকুলের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে নেন। ফরহাদের হাতে তুলে দেয়ার পর আরও ১০ হাজার টাকা ফাতেমার ছেলে রবিউল আউয়ালের বিকাশ নম্বরে নেন।
আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সারসংক্ষেপ প্যাকেটটি খুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (ড. এমদাদুল হকের নামের পাশে) ‘টিক চিহ্ন’ কলম দিয়ে টেম্পারিং করে সেখানে ক্রস চিহ্ন দিয়েছেন।
এজাহারে আরও বলা হয়: আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সারসংক্ষেপ প্যাকেটটি খুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (ড. এমদাদুল হকের নামের পাশে) ‘টিক চিহ্ন’ কলম দিয়ে টেম্পারিং করে সেখানে ক্রস চিহ্ন দিয়েছেন। আর প্রফেসর মো. আবদুর রউফের নামের পাশে ক্রস চিহ্ন এবং এয়ার কমোডর (অব.) এম আবদুস সামাদ আজাদের নামের পাশে ‘টিক চিহ্ন’ দিয়েছেন। অতি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় নথিটি বাইরে রেখে ৮ মার্চ তা রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে জমা দেন। তদন্ত শেষে ১১ জুলাই আদালতে এ মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। সেখানে ছয়জনকে আসামি করা হয়। এরা হলেন : তরিকুল ইসলাম মুমিন, ফাতেমা খাতুন, তার ছেলে ফরহাদ হোসেন ওরফে মোরশেদ আলম ওরফে মিকি, নাজিম উদ্দিন, মো. রুবেল ও এয়ার কমোডর (অব.) এম আবদুস সামাদ আজাদ। ঢাকার এক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এ চার্জশিট গ্রহণ করে পলাতক আবদুস সামাদ আজাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছেন। ২ নভেম্বর এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলায় সরকারি কর্মচারী ফাতেমা খাতুনের ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ গ্রহণের বিষয় রয়েছে-যা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তফসিলভুক্ত অপরাধ। আইনবিশেষজ্ঞদের মতে, এমন অপরাধের তদন্ত অনুমোদনক্রমে শুধু দুদকই করতে পারে। অন্য কোনো সংস্থা করলে তা আইনানুগ হবে না। এরপরও এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে তদন্ত করে আদালতে মামলাটির চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এরপর আবার অধিকতর তদন্তের আবেদনও করা হল। এখতিয়ারবহির্ভূত তদন্তের বিষয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর যুগান্তরে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। এখনও মামলাটির তদন্তভার দুদককে দেয়া হয়নি।
আপনার মতামত জানানঃ