জানুয়ারিতেই পৃথিবীর কাছ দিয়ে বেরিয়ে যাবে বুর্জ খলিফার থেকেও বড় এক গ্রহাণু। আর সেদিকেই এখন নজর মহাকাশ গবেষকদের।
সৌরজগতের সৃষ্টির সময়েই গ্রহাণু তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে এরকম গ্রহাণুর সংখ্যা কতো সেটা সুনির্দিষ্ট করে জানা সম্ভব নয়। তবে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন পৃথিবীর নিকটবর্তী গ্রহাণুর সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত হতে পারে। এসব গ্রহাণুর বেশিরভাগই আকারে ছোট।
৪৫০ কোটি বছর আগে যখন পৃথিবী, মঙ্গল এসব গ্রহের সৃষ্টি হয় তখন গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলেই গ্রহগুলো আকারে বড় হয়েছে। আজকে যে পৃথিবী গ্রহটি এত বড় হয়েছে এর কারণ বিভিন্ন গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষ।
এমনকি ধারণা করা হয় যে পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের সৃষ্টি হয়েছিল মঙ্গলের মতো একটি বস্তুর সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষের ফলেই। পৃথিবী ভেঙে তার টুকরো দিয়েই চাঁদের জন্ম হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর সঙ্গে এসব গ্রহাণুর সংঘর্ষের সম্ভাবনা কতোখানি সেটা বলা খুব কঠিন। তবে এধরনের ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে।
নাসার মহাকাশ বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষ বলেন, মঙ্গল আর বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যে কয়েক কোটি গ্রহাণু ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। তাই কোনো গ্রহের সঙ্গে কোনো একটি গ্রহাণুর সংঘর্ষ অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। আর এতে ধ্বংস হতে পারে গ্রহটি। সেটা আগেও ঘটেছে।
বুর্জ খলিফার থেকেও বড় গ্রহাণু
মহাকাশ শিলা- গ্রহাণু ৭৪৮২ পৃথিবীর কাছ দিয়ে বেরিয়ে যাবে জানুয়ারি মাসেই। নাসার সেন্টার ফর নিয়ার-আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজ (সিএনইওএস) জানিয়েছে, গ্রহাণুটি ঘণ্টায় ৬৯ হাজার ২০০ কিলোমিটার বেগে উড়ছে।
অ্যাস্টেরয়েড ৭৪৮২, সাধারণভাবে ১৯৯৪-পিসিওয়ান নামে পরিচিত। এটির ব্যাস প্রায় ৩ হাজার ২৮০ ফুট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের প্রায় দ্বিগুণ লম্বা এটি।
প্রায় ১৯ লাখ কিলোমিটার দূর দিয়ে এই গ্রহাণু বেরিয়ে যাওয়ার কথা। পৃথিবী এবং চাঁদের মধ্যবর্তী দূরত্বের পাঁচগুণ এটি। তবে মহাকাশবিজ্ঞানের হিসাবে এটি ‘নিয়ার আর্থ অবজেক্ট’ বা পৃথিবীর সন্নিকটস্থ বস্তু হিসাবেই বিবেচিত হয়।
১৯৯৪ সালে প্রথমবার জ্যোতির্বিজ্ঞানী রবার্ট ম্যাকনট গ্রহাণুটি দেখেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার সাইডিং স্প্রিং অবজারভেটরি থেকে তিনি এর পর্যবেক্ষণ করে। এর পরবর্তী বছরগুলোতে বিজ্ঞানীরা অধ্যয়নের পর এর কক্ষপথ নির্ধারণ করতে সক্ষম হন।
সংঘর্ষের সম্ভাবনা কতখানি
ধারণা করা হয় যে পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের সৃষ্টি হয়েছিল মঙ্গলের মতো একটি বস্তুর সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষের ফলেই। পৃথিবী ভেঙে তার টুকরো দিয়েই চাঁদের জন্ম হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর সঙ্গে কোনও গ্রহাণুর সংঘর্ষের সম্ভাবনা কতোখানি; সেটা বলা খুব কঠিন। তবে এধরনের ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে।
গত শতাব্দীর শুরুর দিকে রাশিয়াতে একটি গ্রহাণু পড়েছিল যা পারমাণবিক বিস্ফোরণের মতো আঘাত হেনেছিল, যার ফলে একটি বন ধ্বংস হয়ে যায়।
আর এটা তো সবারই জানা যে সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে বড় আকারের একটি গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হেনেছিল। এর ফলে সারা পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই প্রাণীটি কোটি কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে মহা-দাপটের সঙ্গে বিচরণ করতো।
নাসার বিজ্ঞানী ড. অমিতাভ ঘোষ বলছেন, পৃথিবীর সঙ্গে গ্রহাণুর আবার এধরনের সংঘর্ষের সম্ভাবনা কতো তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।
কিন্তু এরকম জিনিস ঘটে এবং ঘটছে। আগামী ১০ বছরে, কী ১০০ বছরে, কী ১০০০ বছরে এরকম আরো একটি ঘটনা ঘটবে কি না, ঘটলে কখন ঘটবে; সেসব বলা খুবই শক্ত।
গ্রহাণুর সাথে সংঘর্ষের পরিণতি কী হতে পারে?
কোনো একটি গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করলে বা সেটি যদি গিয়ে কোনো একটি দেশের কোনো একটি শহরে গিয়ে পড়ে, তাহলে কী হবে? শুধু কি ওই শহরটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে? নাকি গোটা পৃথিবী? আর এর সম্ভাবনাই বা কতোটা?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্ষতি নির্ভর করবে গ্রহাণুটি আকারে কতটা বড়ো তার উপর। যেমন সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে গ্রহাণুর সাথে সংঘর্ষের কারণে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বিজ্ঞানীরা মনে করেন গ্রহাণুটি এত জোরে পড়েছিল যে এর ফলে বায়ুমণ্ডলে অনেক ধুলো ছড়িয়ে পড়ে। একারণে কয়েক বছর বা কয়েক মাসের জন্য সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারেনি। আর আমরা সবাই জানি প্রাণের বেঁচে থাকার জন্য সূর্যের আলো খুবই জরুরি।
তাই গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে সেটি হবে পারমাণবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী। কোনো একটি শহরে গ্রহাণু এসে পড়লে ধ্বংসযজ্ঞ শুধু ওই শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, পুরো গ্রহেই তার প্রভাব পড়বে। আর এটি ঘটাও খুব স্বাভাবিক। আগেও ঘটেছে। সামনে ঘটার সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
সংঘর্ষের ফলে যদি কোথাও বড় ধরনের আগুন লেগে যায় বা একটা বিশাল গর্ত তৈরি হয় এবং যদি এর সব ধ্বংসাবশেষ বায়ুমণ্ডলে চলে যায়, তাহলে সারা গ্রহেই ধুলোবালি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এরকম হলে পৃথিবীর প্রাণীরা হয়তো বেঁচে থাকতে পারবে না।
এরকম ধূলিঝড় বা ডাস্ট স্টর্ম মঙ্গল গ্রহে দেখতে পাওয়া যায়। এর ফলে সেখানে সূর্যের আলো দেখা যায় না। নাসার পাঠানো রোভার এই ধূলিঝড় লক্ষ্য করেছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৪০
আপনার মতামত জানানঃ