একজন সাধারণ নারী যেখানে ৬০ বছর বাঁচার কথা চিন্তাভাবনা করে, সেখানে এই সম্প্রদায়ের নারীরা ১৬০ বছরেরও বেশিদিন বাঁচে। শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও, এটিই পৃথিবীর একমাত্র সম্প্রদায় যারা গড়ে ১০০ বছরেরও বেশিদিন বাঁচে। আরও একটি বিস্ময়কর তথ্য হলো এই সুন্দরী নারীরা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত সন্তান জন্মদানে সক্ষম। গ্রীক বীর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট এই সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষ বলে দাবি করে তারা।
আর এই নারীদের বাস পাকিস্তানে। এই সম্প্রদায় বা উপজাতি হল বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর এবং সবচেয়ে দীর্ঘায়ু একটি জাতি। বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী নারীরা এখানেই বাস করছে। হানজা উপত্যকায় বাস করে বলে ‘হানজা সম্প্রদায়’ নামে তারা পরিচিত।
পাকিস্তানের কারাকোরাম পর্বতমালার কাছে হানজা উপত্যকার অবস্থান। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই উপত্যকা। এই উপত্যকায় বসবাসরত মানুষদেরই হানজা সম্প্রদায় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই মহাবিশ্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে। একেক সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব ভালো কিংবা খারাপ জিনিসের জন্য পরিচিত হয়ে থাকে।
ঠিক তেমনিভাবে হানজা সম্প্রদায় ও তাদের নিজস্ব গুণের জন্যই পরিচিত। তবে তা অবশ্যই খারাপ নয়, হানজা সম্প্রদায় পরিচিত এখানকার মানুষের দীর্ঘায়ুর জন্য। সেখানে গেলে দেখা যায়, ৬৫-৭০ বছর বয়সী পুরুষ নারী সদ্য জন্ম দেয়া নবজাতক সন্তানের বাবা-মা হয়েছেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! এই সম্প্রদায় পৃথিবীর একমাত্র সম্প্রদায় যেখানে মানুষ গড়ে ১০০ বছরেরও বেশি বাঁচে।
শরীর, চেহারা, কাজ কোথাও তাদের বয়সের ছাপ থাকে না। এছাড়াও এই সম্প্রদায়ের নারীরা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী হিসেবে পরিচিত। এক কথায় এখানকার নারীরা চিরযুবতী। তাদের দীর্ঘায়ু ও চিরযুবতী হওয়ার পিছনের রহস্য জানার প্রতি কমবেশি সকলেরই আগ্রহ রয়েছে এবং তার কারণে প্রচুর গবেষণাও হয়েছে।
গবেষণা থেকে জানা গেছে, তারা ধরাবাঁধা জীবনযাপনে অভ্যস্ত। দিনে দুই বেলা খায় এবং অনেক কায়িক পরিশ্রমের কাজ করে। তারা সব ধরনের ফলের শরবত পান করেন। এসব শরবতে ফলের রস বেশি থাকে।
এছাড়াও হানজা সম্পদের ৯৯ শতাংশ মানুষই ভেজিটেরিয়ান। তাদের খাদ্যদ্রব্যগুলো বেশিরভাগই তৈরি পনির, দুধ, বাদাম এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য দিয়ে। ঘুম থেকে ওঠার পর প্রাতরাশ এবং সূর্য ডুবলে রাতের খাবার সারেন। এর মাঝে নাকি তারা আর কোনো খাবার খায়না।
হানজা উপজাতির জীবনে দুঃখ, অবসাদ, চিন্তার কোনো জায়গা নেই। নারী-পুরুষ উভয়েই পরিশ্রম করেন। ঠোঁটের কোণে সর্বদা হাসি লেগেই রয়েছে।
হানজা সম্প্রদায়কে আলেকজান্ডারের বংশধারার একটা অংশ বলে মনে করেন অনেক ইতিহাসবিদ। তবে স্থানীয় ব্রুশো বা হানজা সম্প্রদায়ের দাবি, আলেকজান্ডার তার ম্যাসিডোনিয়ান সৈন্য নিয়ে এখানে এসেছিলেন। অনেক সৈন্য অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদেরকে এখানে রেখে দেয়া হয়। নিরোগ হানজাদের পিছনে অ্যাপ্রিকটস ফলের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্যান্সার-টিউমার ফ্রি সম্প্রদায় বলা হয় এদের।
অ্যাপ্রিকটস ফলের মধ্য প্রচুর পরিমাণে অ্যামিগডালিন (ভিটামিন বি-১৭) রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। নিরোগ হানজাদের পিছনে অ্যাপ্রিকটস ফলের ভুমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্যান্সার-টিউমার ফ্রি সম্প্রদায় বলা হয় এদের। অ্যাপ্রিকটস ফলের মধ্য প্রচুর পরিমাণে অ্যামিগডালিন (ভিটামিন বি-১৭) রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। বছরে দুই-চার মাস হানজা সম্প্রদায় অ্যাপ্রিকট ফলের জুস ছাড়া আর কিছু খায়না।
এই রীতি তাদের বহু প্রাচীন। আর এর জন্যই তাদের শরীরে কোনো রোগের বাসা বাঁধতে পারে না বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। হানজা সম্প্রদায় ত্বক এত উজ্জ্বল কেন? তাদের মতে, হিমবাহের জলে স্নান এবং পানীয় জল হিসাবে এই জলের ব্যবহারই এর কারণ। ত্বক উজ্জ্বল হওয়ার আরো একটি কারণ হলো, হিমবাহের গরম জলের সঙ্গে তুমুরু নামে এক প্রকার পাতা মিশিয়ে প্রতিদিন হার্বালটি পান করেন এরা।
শিশুকাল থেকেই এই সম্প্রদায়ের মেয়েদের সৌন্দর্য বিকশিত হতে শুরু করে। তাদেরও অবিশ্বাস্য সুন্দরী হওয়ার পিছনের আরেকটি রহস্য হচ্ছে নিয়মিত যোগব্যায়াম করা। তারা প্রতিদিন কাজ শুরুর আগে তিন ঘন্টা যোগব্যায়াম করবেই। নিয়মিত শ্বাসক্রিয়ার ব্যায়াম করে যা তাদের চর্ম এবং শরীরকে নানাভাবে উপকৃত করে। এই জন্যই বয়স বৃদ্ধি পেলে তাদের শরীর সহজে দুর্বল হয় না।
এছাড়াও জানা গেছে, এই সম্প্রদায়ের মানুষের শিক্ষার হার ৯০ শতাংশেরও বেশি, যা যেকোনো উন্নয়নশীল দেশ থেকে অনেক বেশি। তাই এই সম্প্রদায়কে মূর্খ ভাবার ভুল করাই যাবে না। একদমই না! বলাই বাহুল্য, হানজা সম্প্রদায়ে শিক্ষা, আচার-ব্যবহার কিংবা সংস্কৃতি ইত্যাদির দিক দিয়ে যেকোনো দেশের তুলনায় অনেক উন্নত।
এসডব্লিউ/এসএস/২০৫৫
আপনার মতামত জানানঃ