নামিবিয়ার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের উপত্যকা ঘেরা একটি জায়গা কিউনেন। কিউনেনের রাজধানী ওপুয়ো। আধুনিক সভ্যতার সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই ওপুয়োতে সর্বসাকুল্যে ১২ হাজার লোকের বসবাস। ওপুয়োতে আফ্রিকার এক প্রাচীন অধিবাসী ওভাহিম্বা বা হিম্বা সম্প্রদায়ের মানুষজনেরা বসবাস করে।
ওপুয়োর এক প্রান্তে রয়েছে কিছুটা মফস্বলের ছোঁয়া আর অন্য প্রান্তে রয়েছে পুরোপুরি গ্রামাঞ্চল। এই প্রদেশের নারীদের পানি ছোঁয়া বারণ। এমনকি জামা কাপড় কাচাও বারণ। মরুভূমির উত্তাপের কারণে পরনে স্বল্পবসন আর পর্যাপ্ত পানীয় জলের অভাবে পানিবিহীন গোসল প্রথার প্রচলন শুরু হয়েছে তাদের মধ্যে।
এই আদিবাসীর নারীরা যেন কোনোভাবে পানি না ধরে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এমনকি প্রচণ্ড খরার মধ্যেও তারা বিনা গোসলে থাকেন। শুধুমাত্র পুরুষদের রয়েছে পানি ব্যবহারের সুযোগ। তবে হিম্বা নারীরা পানি দ্বারা গোসল না করলেও তাদের শরীরে কোনো প্রকার দুর্গন্ধ হয় না। তারা তাদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে প্রতিদিন ধুম্র স্নান করেন।
তারা মূলত কমিফোরা গাছের পাতা পুড়িয়ে সেই ধোঁয়া দিয়ে গোসল করে থাকে। তারা যে ধোঁয়া থেকে উত্তাপ গ্রহণ করে থাকে, সেই ধোঁয়াতে জীবাণু ধ্বংসকারী অ্যান্টিমাইক্রোরিয়াল এজেন্ট থাকে। তাই শরীর গন্ধ হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তাছাড়াও কমিফোরা গাছের পাতায় রয়েছে শরীরকে সুরভিত করার অসাধারণ ক্ষমতা। ফলে একই সঙ্গে সেটি সুগন্ধি হিসেবে কাজ করে। এটি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে মারতেও সাহায্য করে। আর এমন গুণাবলি সম্বলিত উপাদান পানি দ্বারা গোসলের বিকল্প হতেই পারে। তাই আদিবাসী উপজাতিদের একেবারেই নির্বোধ ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
তবে হিম্বাদের আরো এমন কিছু কিছু তথ্য রয়েছে যা বিশ্বাস করা আবার খুবই কঠিন। হিম্বা নারীরা তাদের গ্রামে বেড়াতে আসা বিদেশি পুরুষদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। তাও আবার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
আফ্রিকান পত্রিকা ‘ফেসটুফেস আফ্রিকা’ ও ‘গার্ডিয়ান নাইজেরিয়া’ এমনই তথ্য তুলে ধরেছেন। শুধুমাত্র পর্যটকদের আকর্ষিত করতেই এই অদ্ভুত পথ বেছে নিয়েছে তারা।
আমেরিকান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইএসআরআই এর তথ্যমতে, হিম্বাদের অনেক গ্রামে পুরুষ স্বল্পতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, হিম্বা যুবক ছেলেরা কাজের সন্ধানে শহরে চলে যাওয়ার ফলে নাকি এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে নাকি এমনও গ্রাম রয়েছে যেখানে পুরুষ মানুষ নেই বললেই চলে।
হিম্বা মেয়েদের বিয়ে হয় মাত্র ১০ বছর বয়সে। বিয়ের আগে হবু বধূকে কিছু শক্তিশালী তাগড়া ষাঁড় উপহার হিসেবে পাঠাতে হয় পুরুষকে। হিম্বা পুরুষদের কমপক্ষে দুইজন করে স্ত্রী থাকে। দ্বিতীয় বিয়ের আগে প্রথম স্ত্রীকে উপযুক্ত বাড়ি তৈরি করে দিলে দ্বিতীয় বিয়েতে কোনো বাঁধা থাকে না। হিম্বা সমাজে শুধুমাত্র বিয়ের পরই একটি ছেলেকে পরিপূর্ণ পুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিয়ের আগে হিম্বা পুরুষরা পরিপূর্ণ পুরুষ নয়। তবে মেয়েদের বেলায় শুধু বিয়েই নয় বরং সন্তান না হওয়া পর্যন্ত একজন হিম্বা নারীকে পরিপূর্ণ নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। এখানে মেয়েরা নিজের পছন্দে নয় বরং বাবার পছন্দে বিয়ে করতে হয়। তাই হিম্বা নারীদের মনে প্রেম জেগে উঠলেও কিছুই করার নেই সেখানে।
এই গোষ্ঠীর রীতিনীতি আর বিচিত্রতার যেন শেষ নেই। এদের দেখতে আফ্রিকার অন্যান্য উপজাতির মতো মনে হলেও এদের ধর্ম, সৃষ্টি, সংস্কৃতি কিন্তু একেবারেই ভিন্ন। আফ্রিকার অন্যান্য উপজাতির মতো এরা শরীরে কোনো প্রকার দাগ কেটে ক্ষতবিক্ষত করে না। সেদিক থেকে এরা বেশ এগিয়ে আছে। আর নারীরা খুব বেশি রূপবতী না হলেও গুণবতী বলতে মোটেও দোষের কিছু নেই।
কারণ এখানে নারীরাই বেশ পরিশ্রমী। রান্না ও বিভিন্ন ট্র্যাডিশনাল অলংকার তৈরি ও বিক্রির পাশাপাশি দিনের বড় একটা সময় শারীরিক পরিচর্যার পিছনে ব্যয় করতে হয় হিম্বা নারীদের।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭৫০
আপনার মতামত জানানঃ