সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৩ নভেম্বর থেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি৷ হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণ বা সিসিইউতে রয়েছেন তিনি৷ ডাক্তাররা তাকে বেশ কয়েকবার দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷ প্রসঙ্গত, শর্ত সাপেক্ষে জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর ইতিমধ্যেই একাধিকবার খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে৷
এর মধ্যে ২৭ এপ্রিল থেকে টানা ৫৪ দিন তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি৷ এ সময়ে বিভিন্ন সময় তার আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভোগার তথ্য গণমাধ্যমে উঠে আসে৷
তবে এবার তিনি তার পুরনো জটিল রোগগুলো ছাড়াও ডিকমপেন্স্যাটেড লিভার সিরোসিস-এ আক্রান্ত হয়েছেন। এখন এর দু’টি মাত্র চিকিৎসা সম্ভব; স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন থেরাপি এবং তাতেও কাজ না হলে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা। এর কোনোটিই বাংলাদেশে সম্ভব নয় এবং করার সুযোগ নেই বলে অনেক বিশেষজ্ঞই জানিয়েছেন।
শরীর থেকে রক্ত যেতে যেতে খালেদা জিয়ার হিমোগ্লোবিন একেবারে কমে গেলে এবং রক্তবমি হতে থাকলে তাকে এবার হাসপাতালে নেয়া হয়। ডাক্তারেরা এন্ডোস্কপি করে তার লিভার সিরোসিস শনাক্ত করেন। তার দেহে দফায় দফায় রক্ত দেয়া হয় এবং তার বড় হয়ে যাওয়া রক্তনালী এন্ডোস্কপির মাধ্যমে Oesophageal Band ligation করা হয়েছে এবং সিসিইউ-তে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এর বেশি কিছু বাংলাদেশের ডাক্তারদের করার নাই বলেই জানানো হয়েছে।
এছাড়া বেগম জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ এবং হার্ট, কিডনি ও চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি নিয়মিত চিকিৎসাধীন ও চিকিৎসকদের তদারকিতে ছিলেন।
এখন কেমন আছেন খালেদা জিয়া?
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অনেকটা স্থিতিশীল। গতকাল তার রক্তক্ষরণ হয়নি। শারীরিক অন্যান্য প্যারামিটারও ছিল অনেকটা স্বাভাবিক।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, অনেকটা নিরিবিলি সময় কাটছে খালেদা জিয়ার। ডাক্তার-নার্সদের সঙ্গে তেমন একটা কথা বলেন না তিনি। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে জানান খুব আস্তে করে।
শারীরিক দুর্বলতার কারণে ঘুমের নির্দিষ্ট সময় নেই তার। তা ছাড়া বেশিরভাগ সময়ই চোখ বুজে থাকেন; চিকিৎসকরা সিসিইউতে এলে প্রয়োজনীয় কথা বলেন।
সিসিইউতে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক, পরিবারের সদস্য এবং শুধু বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রবেশাধিকার রয়েছে। সিসিইউর সামনে তার নিরাপত্তার জন্য পোশাকধারী তিনজন পুলিশকে দেখা গেছে। তারা নিয়মমাফিক ডিউটি করেন।
সূত্র জানায়, সকাল ৬টার মধ্যেই সাধারণত খালেদা জিয়ার ঘুম ভাঙে। এরপর পরিচ্ছন্ন হয়ে ওষুধ সেবন করেন। এর আধা ঘণ্টা পর হালকা নাশতা করেন। নাশতায় মূলত তার বাসা থেকে সরবরাহ করা তরল খাবার দেওয়া হয়। এরপর তিনি আবারও একটু ঘুমিয়ে নেন।
গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসকদের মধ্যে হাসপাতালে ছিলেন কেবল ডা. এজেডএম জাহিদ। শারীরিকভাবে একটু ভালো থাকায় দুপুর ২টায় গোসলের জন্য তাকে তার কেবিনে (নং ৭২০৫) নেওয়া হয়।
দুপুর আড়াইটায় তার ছেলের স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি হাসপাতালে এসে খালেদা জিয়ার কেবিনে যান। বিকেল ৪টায় তাকে আবারও সিসিইউতে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে তাকে দুপুরের খাবার ও ওষুধ খাওয়ানো হয়। খাবারের মধ্যে বাসা থেকে আনা তরল খাবার ছিল।
এভারকেয়ার হাসপাতালের নিয়মানুযায়ী, বাইরের খাবারের বিষয়ে বিধিনিষেধের বিষয়টি চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। সে অনুযায়ী মাঝেমধ্যে বাসা থেকে তার জন্য তরল খাবার নিয়ে আসা হয়।
তবে হাসপাতাল থেকে দেওয়া মেডিকেল ডায়েট ফুডচার্ট অনুযায়ী তাকে খাবার দিতে হয়। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে শর্মিলা রহমান সিঁথি হাসপাতাল থেকে চলে যান। সাড়ে ৫টায় ডা. এজেডএম জাহিদও হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
হাসপাতালে খালেদা জিয়ার কেবিনের পাশে আরেকটি কেবিন বুকিং রয়েছে। কেবিনের সামনে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর (সিএসএফ) বেশ কয়েকজন সদস্য সবসময় দায়িত্ব পালন করেন। খালেদা জিয়ার গাড়িচালকও নিয়মিত হাসপাতালে আসা-যাওয়া করেন।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গতকাল অনেকটা স্থিতিশীল ছিল। আজ সোমবার তার একটি টেস্ট রয়েছে। এই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬১৮
আপনার মতামত জানানঃ