পৃথিবীর সবচেয়ে জনবিচ্ছিন্ন আদিম উপজাতি হচ্ছে দানি। বাস ইন্দোনেশিয়ায়। জনজীবনের সঙ্গে তাদের কোনো যোগ নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে জনবিচ্ছিন্ন আদিম এই উপজাতির কাছে তাদের গ্রামটিই যেন তাদের পুরো বিশ্ব। পৃথিবী থেকে জনবিচ্ছিন্ন হওয়ায় তাদের নিজস্ব নিয়ম-রীতি রয়েছে যা অন্যদের তাদের সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলেছে। এই উপজাতির মধ্যে প্রচলন রয়েছে অদ্ভুত কিছু রীতি।
যেন পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন এ গ্রাম। আবার এই গ্রামই তাদের পৃথিবী। ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম পাপুয়ার ওগি গ্রামে বাস দানি উপজাতির। ১৯০৯ সালে পর্তুগিজ ভূপর্যটক হেনড্রিকাস অ্যালবার্টাস লরেনজের তত্ত্বাবধানে একটি অভিযানকারী দল প্রথম পা রাখে পুনকক ত্রিকোরা পর্বতমালায়। সেখানেই দেখা মেলে দানি উপজাতির মানুষদের।
এরপর ১৯৩৮ সালে মার্কিন ফিলান্থ্রপিস্ট রিচার্ড আর্চবোল্ড তার এক অভিযানের মাধ্যমে এই উপজাতির কথা জানতে পারে গোটা বিশ্ব। তাদের ভিন্নধর্মী সংস্কৃতি ও নিজস্ব ঐতিহ্যের প্রতি একাগ্রতার কারণে বিশ শতাব্দীর মধ্যেই দানি উপজাতি সম্পর্কে বিশ্বের জানার আগ্রহ বাড়তে থাকে। তাদের সংস্কৃতি, জীবনাচরণ ইত্যাদি হয়ে ওঠে আগ্রহের মূল কেন্দ্র।
এই দানি উপজাতির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো তাদের পোশাক। নারী-পুরুষ উভয়েরই বুক থাকে উন্মুক্ত। নারীরা তাদের কোমরে ঘাসের তৈরি একধরনের স্কার্ট পরে থাকে। অন্যদিকে পুরুষেরা তাদের যৌনাঙ্গ ঢাকতে একটি বিশেষ পোশাক পরে থাকে। এটিকে বলা হয় ‘কোটেকা’।
পোশাক নিয়ে তাদের এমন উচ্চ দৃষ্টিভঙ্গির মতোই নিজেদের অঙ্গবিচ্ছেদের জন্যও তারা বেশ পরিচিত। পরিবারের কারও মৃত্যু হলে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তারা হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে ফেলেন। প্রিয়জনের হারানোর শোককে ফুটিয়ে তুলতে ও তাদের প্রতি সম্মান জানাতে এই প্রথা পালন করা হয়।
তবে এই প্রথায় আঙ্গুল শুধু নারীরাই হারায়। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম খাটে না। ফলে একদিকে যেমন বর্বর এই নিয়ম, একইসঙ্গে বৈষম্যমূলক অবস্থার পরিচয় দেয়। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ান সরকার এই প্রথা বন্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তবে দানি উপজাতির বৃদ্ধাদের মাঝে এখনও এই প্রথা পালনের রীতি রয়েছে।
প্রতিবছর সাধারণত আগস্ট মাসের দিকে তারা উৎসব পালন করে। এতে তারা অন্যান্য এলাকার উপজাতির সঙ্গে ছদ্মযুদ্ধের আয়োজন করে থাকে। পর্যটকদের জন্য নয়, নিজস্ব ঐতিহ্যের পালনের জন্যই এই উৎসব পালন করা হয়।
ছদ্ম-উৎসবটির নাম ‘ব্যালিয়াম ভ্যালী ফেস্টিভ্যাল’। উৎসবে দানিদের পাশাপাশি ইয়ালি, লানিরা তাদের সবচেয়ে ভালো যোদ্ধাদের নিয়ে আসে এবং তাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে সবার সামনে তুলে ধরেন।
যদিও যোদ্ধা হিসেবে দানিদের বেশ সম্মান রয়েছে তবে অতিথিপরায়ণ হিসেবেও তাদের সুনাম রয়েছে। তাদের আচরণ বা বেশভুষা দেখতে ভীতিকর মনে হলেও তারা বেশ ভালো ব্যবহার করে থাকে অতিথিদের সাথে। ভাষাবিদেরা দানিদের অন্তত চারধরণের ভাষার সন্ধান পেয়েছে।
মিষ্টি আলু তাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় খাবার। তাছাড়া বিভিন্ন উৎসবে শুকরের মাংস খাওয়া হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি শুকর যিনি শিকার করতে পারেন তাকে বেশ প্রভাবশালী মনে করা হয়ে থাকে। মাটির ভেতর খাবার রেখে তারপর আগুন জ্বালিয়ে তারা রান্না করে থাকে।
বর্তমানে পর্যটকদের আগমনের কারণে আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে তাদের কিছুটা পরিচিতি হচ্ছে, যার ফলে তাদের কার্যকলাপে পরিবর্তন এসেছে। তবে আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া লাগলেও তারা আজও নিজস্ব ঐতিহ্য বজায় রেখেছে, যা তাদের নিজস্বতা ব্যাখ্যা করে।
এসডব্লিউ/এসএস/২০৫৫
আপনার মতামত জানানঃ