ভবিষ্যতের মহামারিগুলোর ভয়াবহতা বর্তমানের কোভিড পরিস্থিতিকে ছাপিয়ে যেতে পারে, করোনা ভাইরাসের সংকটের চেয়ে ভবিষ্যতের মহামারি আরো মারাত্মক হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার অন্যতম এই উদ্ভাবক সতর্ক করে বলেছেন, বর্তমান করোনা সংকটের চেয়ে ভবিষ্যতের মহামারি আরও প্রাণঘাতী হতে পারে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট এক বক্তৃতায় এই সতর্কতার কথা বলেন। আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সতর্ক করে দিয়ে সারাহ গিলবার্ট বলেন, বর্তমান করোনা সংকটের চেয়ে ভবিষ্যতের মহামারি আরও মারাত্মক হতে পারে। ইতিমধ্যে যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে তা যাতে বৃথা না যায়, সেজন্য মহামারি মোকাবিলার প্রস্তুতিতে আরও তহবিল দরকার।
করোনার ধরন সম্পর্কে আরও তথ্য না জানা পর্যন্ত লোকজনের ওমিক্রনের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত বলে মন্তব্য করে সারাহ গিলবার্ট বলেন, কোনো ভাইরাস দ্বারা মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়ার এটাই শেষ ঘটনা হবে না। সত্য হলো, পরের মহামারিটি আরও খারাপ হতে পারে। সেটি আরও সংক্রামক বা আরও প্রাণঘাতী বা উভয়ই হতে পারে।
ওমিক্রন বৈকল্পিকের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কম কার্যকর হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশে করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক।
পরের মহামারি মোকাবিলার প্রস্তুতির জন্য এখনো তহবিল নেই বলে উল্লেখ করেন সারাহ গিলবার্ট। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে অগ্রগতি, জ্ঞান অর্জন, তা যেন বৃথা না যায়।’
করোনার নতুন ধরনটির বিস্তার শ্লথ করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সারাহ গিলবার্ট।
এর আগে মহামারির ধাক্কায় বিশ্বে কর্মসংস্থান ধারণার চেয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। একইসঙ্গে ধনী ও দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর পুনরুদ্ধার গতিতে পার্থক্যের জন্য অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধির বিষয়েও সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রধান গাই রাইডার বলেন, শ্রমবাজারকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার প্রক্রিয়া এখন মন্থর গতিতে চলছে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে বড় একটি পার্থক্য তৈরি হওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতির নিম্নগামী হওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস সতর্ক করে বলেছেন, করোনা মহামারিই শেষ মহামারি নয়; আরও বড় মহামারি আসতে পারে। এ জন্য বিশ্বকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এটাই শেষ মহামারি নয়; বিশ্বকে পরবর্তী মহামারির জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হতে হবে।’
গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, মহামারি ও প্রাদুর্ভাব জীবনের একটা অংশ। তবে যখন পরবর্তী মহামারি আসবে, তখন বিশ্বকে প্রস্তুত থাকতে হবে। অন্তত এখনকার সময়ের চেয়ে আরও বেশি প্রস্তুত হয়ে থাকতে হবে।’
আফ্রিকায় প্রথম অমিক্রন শনাক্ত হয়। করোনার নতুন এই ধরন খুব দ্রুত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। আল-জাজিরার তথ্যমতে, ইতিমধ্যে বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে অমিক্রনে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারি আন্তর্জাতিক কমিউনিটির সামনে সবচেয়ে বড় যে কাজগুলো করার সুযোগ তৈরি করেছে তার মধ্যে রয়েছে ভ্যাকসিনের প্রতি বৈশ্বিক আস্থা ফিরিয়ে আনা, তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা, বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা, জলবায়ু পরিবর্তন সামাল দেওয়া এবং ডিজিটাল বিভাজন দূর করা।
টিকা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, টিকা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্থতা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে। এমনকি টিকা সংগ্রহ, পরিবহন ও বিশ্বব্যাপী সরবরাহে সহায়তার জন্য সরকার, অংশীদার ও দাতাদের সঙ্গে জনসাধারণ যাতে এটা গ্রহণ করে সে জন্য টিকার ওপর আমাদের অবশ্যই আস্থা বাড়াতে হবে। তারা বলেন, আস্থা ব্যতীত, টিকাগুলো কেবল চিকিৎসকের আলমারিতে থাকা দামি ওষুধের শিশি।
মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে বলেন, কোভিড-১৯ শিশু ও তরুণদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যজনিত ব্যাধিগুলো উদ্বেগজনক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে আরও বেশি কাজ করতে আন্তর্জাতিক কমিউনিটির প্রতি তারা আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, দেশগুলোকে এই সমস্যা মোকাবিলায় যত বিনিয়োগ দরকার তা করতে হবে, নাটকীয়ভাবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং কমিউনিটি ও স্কুলগুলোতে তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তার বিস্তার ঘটাতে হবে এবং ঝুঁকির মুখে থাকা পরিবারের শিশুরা যাতে বাড়িতে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সুরক্ষা পায় তা নিশ্চিত করার জন্য শিশু লালনপালন সংক্রান্ত কর্মসূচি (প্যারেন্টিং প্রোগ্রাম) চালু করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৩১
আপনার মতামত জানানঃ