সিলেট আদালতে নিজ কক্ষে নারী কনস্টেবলের সঙ্গে ‘অন্তরঙ্গ’ হওয়ায় শাস্তির মুখে পড়েছেন এক পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর)। সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ ওই পরিদর্শককে ক্লোজড করে বৃহস্পতিবার পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেন।
আদালতের দায়িত্বে থাকা সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি প্রসিকিউশন) খোকন চন্দ্র দাসের একটি লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ। তিনি জানান, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোর্ট ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অভিযুক্ত প্রদীপ কুমার দাস মহানগর পুলিশের আদালত পরিদর্শকের দায়িত্বে ছিলেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত নারী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) আশরাফউল্লাহ তাহের। এ ছাড়া প্রদীপের অভিযোগের তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সূত্র জানায়, ছুটিতে থাকা এক নারী কনস্টেবলকে রাতের আঁধারে আদালত ভবনের নিজ কক্ষে ডেকে নেন পুলিশের আদালত পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাস। রাত ৮টার দিকে নিজ অফিস কক্ষের দরজা খোলা এবং ভেতরে আলো নেভানো দেখে অন্য পুলিশ সদস্যরা সেই কক্ষে ঢোকেন।
এ সময় আলো জ্বালালে দুজনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান। পরে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। এরপর সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি প্রসিকিউশন) খোকন চন্দ্র দাস লিখিতভাবে বিষয়টি পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে প্রশাসনিক কারণে ক্লোজ করেছেন।
তিনি বলেন, আদালত পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাসের অফিস কক্ষে যাওয়া ওই নারী কনস্টেবল একদিন আগে ৬ দিনের ছুটিতে ছিলেন। তিনি এখানে কিভাবে গেলেন এবং ওখানে আসলে কী হয়েছে সব কিছুই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় ওই নারী পুলিশ সদস্যসহ দুজনের বিরুদ্ধেই আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
তবে এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগে অক্টোবর মাসে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পারিবারিক মামলার বাদী নারীর সঙ্গে ‘অন্তরঙ্গ’ অবস্থায় আটক হন তোফাজ্জল হোসেন (৩৭) নামে পুলিশের এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই)। ২৯ অক্টোবর মধ্যরাতে উপজেলার ধর্মপুর (ছড়ারপাতা) গ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, রাত ১০টার দিকে এএসআই তোফাজ্জল হোসেন ছড়ারপাতা গ্রামের এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীর বাড়িতে আসেন। এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তারা গোয়ালঘরে খোঁজ নিলে সেখানে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় ওই নারীর সঙ্গে তাকে দেখেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে উত্তেজিত জনতা তোফাজ্জলকে আটক করে বাড়ির উঠোনের একটি আম গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
এর আগে গত মার্চ মাসে রাজশাহীর পবা উপজেলায় এক নারীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় রাসেল রানা নামে এক পুলিশ উপপরিদর্শককে (এএসআই) হাতেনাতে আটক করে এলাকাবাসী। ১৯ মার্চ রাতে এই ঘটনার পর রাতেই রাসেল রানাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। তিনি রাজশাহী মেট্রোপলিন পুলিশের শাহ মখদুম থানায় কর্মরত ছিলেন।
শাহ মখদুম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে জানান, স্বামী পরিত্যক্ত নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলেন শাহ মখদুম থানার উপপরিদর্শক রাসেল। মাঝে মধ্যেই রাসেল গভীর রাতে ওই নারীর বাড়িতে যেত এবং ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতো। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে কানাঘুষা চলছিল।
ঘটনার দিন রাতে রাসেল ওই নারীর ঘরে ঢুকলে এলাকাবাসী তাদের হাতেনাতে ধরে আটকে রেখে পবা থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পবা ও শাহ মখদুম থানা পুলিশ গিয়ে রাসেলকে উদ্ধার করে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭১৫
আপনার মতামত জানানঃ