নেই তেমন কোনও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। চিকিৎসক-নার্সও কম। টিকা নেই। কোভিড মহামারিতে আফ্রিকার গরিব দেশগুলোর কী হবে, তাই নিয়ে গোড়া থেকেই চিন্তায় ছিল বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু আফ্রিকার বাস্তব পরিস্থিতি অন্য কথাই বলছে। রহস্যজনক ভাবে টিকা, চিকিৎসাহীন আফ্রিকায় করোনার সংক্রমণের প্রকোপ বেশ কম। কম মৃত্যুও। এ পরিস্থিতিতে বেশ বিভ্রান্তই বিজ্ঞানীরা।
জিম্বাবোয়ের হারারের ব্যস্ত বাজার এলাকা। পকেটে মাস্ক নিয়ে ঘুরছিলেন ন্যাশা নদৌউ। তার আশপাশের সকলেরই হয়তো পকেটে মাস্ক পাওয়া যাবে, কিন্তু মুখে কারও নেই। কেউ ফল-সবজি কিনতে এসেছেন, কেউ বেচতে এসেছেন।
নদৌউ বলেন, ‘‘কোভিড-১৯ চলে গেছে। কবে শেষ বার কোভিডে মারা যাওয়ার খবর শুনেছেন এখানে?’’ তা হলে সঙ্গে মাস্ক রেখেছেন কেন? উত্তরে তৈরি নদৌউ বললেন, ‘‘ও তো পকেট বাঁচাতে। পুলিশ ধরলে মাস্ক না থাকলেই ঘুষ নেবে।’’
এই সপ্তাহে গোটা জিম্বাবোয়েতে নতুন করে করোনা সংক্রমণের খবর মিলেছে মাত্র ৩৩টি। মৃত্যুর কোনও খবর নেই। গোটা আফ্রিকা মহাদেশেই কোভিড সংক্রমণ কমেছে অনেকটাই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-ও জানিয়েছে, জুলাই মাস থেকে করোনা সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে এই মহাদেশে। তবে আগেও কোনও দিনই আফ্রিকার ঘরে-ঘরে করোনা সংক্রমণের খবর যায়নি।
গত বছর যখন করোনা-আতঙ্ক শুরু হয়, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আফ্রিকা নিয়ে প্রবল চিন্তায় পড়েন। আশঙ্কা করেন লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা পড়বেন এই মহাদেশে। এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট করে জানা নেই, কত জন সংক্রমিত হয়েছেন, কত জন মারা গিয়েছেন আফ্রিকায়।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, আফ্রিকার দেশগুলোতে যথাযথ পর্যবেক্ষণ-ব্যবস্থা নেই, সরকারি নজরদারি নেই। ফলে বাস্তব পরিস্থিতি কী, তা কেউ জানে না। তবে সংক্রমণ বা মৃত্যু মারাত্মক বাড়লে, আশপাশে চোখ রাখলেই বোঝা যায়।
বিশেষজ্ঞেরা স্বীকার করেছেন, আফ্রিকার দেশগুলোতে এখন কোভিড সংক্রমণ আরও কমেছে। কিন্তু যে কোনও সময়ে পরিস্থিতি ঘুরে যেতে পারে বলেও সতর্ক করছেন তারা।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ওয়াফা এল-সাদর বলেন, ‘‘আফ্রিকা নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিভ্রান্ত। রহস্যজনক ব্যাপার। আফ্রিকার কাছে টিকা নেই। কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরিকাঠামো নেই। কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকায় এ সবই রয়েছে। অথচ ওদের থেকে আফ্রিকার অবস্থা অনেক ভাল।’’
গড়ে ৬ শতাংশেরও কম টিকাকরণ হয়েছে আফ্রিকায়। সেখানে ইউরোপ-আমেরিকায় হয়েছে ৭০-৮০ শতাংশ। কিন্তু গোটা ইউরোপের হালই ফের খারাপ। বিশেষ করে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, রাশিয়ার পরিস্থিতি বেশ জটিল।
বিশেষজ্ঞদের একটি দল মনে করে, আফ্রিকায় অল্পবয়সিদের সংখ্যা বেশি। গড়ে ২০ বছর। পশ্চিম ইউরোপের তরুণ প্রজন্মের গড় বয়স ৪৩। তা ছাড়া আফ্রিকায় আধুনিক জীবনযাপন কম। তারা বাড়ির বাইরে খোলা আকাশের নীচে বেশি সময় কাটান, বদ্ধ জায়গায় থাকেন কম। নিম্ন সংক্রমণ হারের পিছনে আরও কোনও কারণ থাকতে পারে কি না, (যেমন জেনেটিক) তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের অনেকে আবার বলছেন, আফ্রিকায় ম্যালেরিয়া ও ইবোলার প্রকোপ বেশি। এই রোগে যারা আগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের কোভিড কাবু করতে পারছে না। আর এক দল প্রশাসনের কৃতিত্বও দেখছে। তাদের বক্তব্য, মালি-র মতো দেশও অতিমারির আঁচ পেতেই সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। ফলে বাইরে থেকে ভাইরাস প্রবেশ করেনি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৪৫
আপনার মতামত জানানঃ