কেন্ট দক্ষিণ পূর্ব ইংল্যান্ডের একটি কাউন্টি এবং হোম কাউন্টিগুলির মধ্যে একটি। এই শহরেরই একটি হাসপাতালে টেকনিক্যাল সুপাইজার পদে কাজ করতেন ডেভিড ফুলার। বয়স ৬৭ বছর।
দুটি খুনের মামলার আসামী সাবেক এই হাসপাতাল কর্মীর বাসায় তল্লাশি করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে গা হিম করা সব তথ্য। সূত্র মতে, গত বৃহস্পতিবার ১৯৮৭ সালে দুই নারী ও শিশুকে খুনের মামলায় দোষ স্বীকার করেছেন ওই ব্রিটিশ নাগরিক।
ব্রিটিশ সম্প্রচার মাধ্যম স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেভিড ফুলার (৬৭) নামে ওই ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি করতে গিয়ে গোয়েন্দারা বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার করে। যার মধ্যে আছে কম্পিউটার হার্ডড্রাইভ, সিডি এবং মেমোরি কার্ড। আর এসব ভয়ানক সব যৌন নির্যাতনের ভিডিও এবং ছবিতে ভরা।
প্রসঙ্গত, প্রায় ৩৪ বছর আগে ওয়েন্ডি নেল এবং ক্যারোলিন পিয়ার্স নামে দুজনকে তিনি হত্যা করেন। নেলের বয়স ছিল ২৫ এবং পিয়ার্সের ২০। সেই মামলাতেই তার বিচার চলছে। ফুলার কাজ করতেন ইংল্যান্ডের কেন্টে একটি হাসপাতালে।
ফুলারের বাড়ি থেকে উদ্ধার হার্ডড্রাইভ, সিডি এবং মেমোরি কার্ড থেকে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি ছবি উদ্ধার করা হয়েছে। সে সবে রয়েছে শিশু পর্নোগ্রাফি থেকে শুরু করে বহু বীভৎস সব ছবি। হাসপাতালের মর্গে মৃতদেহের ওপর যৌন নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজও পাওয়া গেছে।
আর সেগুলো চালাতেই স্তম্ভিত হয়ে যান তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা। ড্রাইভগুলিতে থাকা ফুটেজে কর্মকর্তারা দেখতে পান, মর্গে মহিলাদের মৃতদেহের সঙ্গে যৌনাচার করছে ফুলার। ফুলার রীতিমত মৃত মহিলাদের নাম অনুযায়ী ফাইল তৈরি করে যৌনাচারের ছবি ও ভিডিও সেভ করে রেখে দিয়েছে ওই দুই ড্রাইভে।
২০০৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া ফুলারের এই বিকৃত যৌনাচারের তালিকায় তিনটি শিশুর মৃতদেহও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানা যায়।
সূত্র মতে, ফুলারের বাসার কম্পিউটার হার্ডড্রাইভ এবং ফার্নিচারের পেছনে লুকিয়ে রাখা হাতে লেখা ডায়েরিতে তার যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের বয়স ও পরিচয়ের বিস্তারিত সবকিছু লেখা আছে।
স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তিনি এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন। তার নির্যাতনের শিকার সবচেয়ে কম বয়সী শিশুটির বয়স মাত্র ৯ বছর এবং নির্যাতনের শিকার সবচেয়ে বেশি বয়সী নারীর বয়স ১০০ বছর।
স্কাই নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফুলার স্বীকারোক্তিতে বলেছেন যে সব অপরাধই তিনি করেছেন হাসপাতালের মর্গে। ১৯৮৯ সাল থেকে সেখানে টেকনিক্যাল সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, ফুলার হাসপাতালে রাতের শিফটে কাজ করতেন। অন্য স্টাফরা যখন চলে যেতেন তখন তিনি ঢুকে পড়তেন মর্গে।
তদন্ত কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছেন যে, ফুলার ৯৯ জন নারীর মৃতদেহের ওপর যৌন নির্যাতন করেছেন। এর মধ্যে ৭৮ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। তবে তারা ধারণা করছেন, নির্যাতনের শিকার মৃতদেহের সংখ্যা একশর বেশি হবে।
এসব ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে কেন্ট পুলিশ। দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের কেন্ট, সাসেক্স, এসেক্স এলাকায় বসবাসরত ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এই যোগাযোগ এবং এ সংক্রান্ত নথি প্রস্তুত করতেই ২০ লাখ ডলার খরচ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, ব্রিটেনের একাধিক পার্লামেন্ট সদস্য এবং নারীদের চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান ফুলারের বিষয়ে গণতদন্তের দাবি জানিয়েছে। এমন একজন ভয়ঙ্কর নেক্রোফিলিয়াক (মৃতদের সঙ্গে যৌন সঙ্গমকারী) কীভাবে এক দশক ধরে নির্বিঘ্নে হাসপাতালে কাজ করে গেল তা নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা। সূত্র মতে, ফুলারের মামলার রায় ঘোষণার তারিখ এখনো নির্ধারণ করেননি আদালত।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব প্রীতি প্যাটেল বলেন, ‘এটা খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। অপরাধের অসুস্থ প্রকৃতি দেখে সাধারন মানুষের মধ্যে উদ্বেগের পাশাপাশি তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘৩৪ বছর আগে ওয়েন্ডি নেল এবং ক্যারোলিন পিয়ার্স নামে যে দুই তরুনীর জীবন নির্মমভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, আশা করি অপরাধীর গ্রেফতার হওয়ায় তাদের পরিবার কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পাবে।’
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৩০
আপনার মতামত জানানঃ