রংপুরের হারাগাছে পুলিশের নির্যাতনে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগে বিক্ষুব্ধ জনগণের থানা ঘেরাও, ভাঙচুরসহ সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুদিন আগেই এ কমিটি গঠন করা হলেও আজ বুধবার বিষয়টি জানা গেছে। এখানে বিশিষ্টজনেরা বলছেন, যে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশ বাহিনী, তার তদন্তেও পুলিশের পক্ষ থেকে হলে, সেখানে নিরপেক্ষতা কতটা আশা করা যায়!
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) সাজ্জাদ হোসেন বিষয়টি জানিয়ে বলেন, কমিটির প্রধান হলেন মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মেহেদুল করিম। সদস্যসচিব হয়েছেন সহকারী কমিশনার (পরশুরাম জোন) আরিফুজ্জামান, সদস্যপদে আছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (সিটি-এসবি) আবু বক্কর সিদ্দিক ও উপকমিশনার (ডিবি) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান।
সাজ্জাদ হোসেন আরও বলেন, ১ নভেম্বর এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই দিন থেকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে।
এলাকাবাসীর নামে পুলিশের মামলা
এদিকে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তার কিংবা আটক নেই। থানা-পুলিশ জানায়, ১ নভেম্বর রাতে নজরুল ইসলাম (৫৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে এনে হারাগাছ থানা ঘেরাও, হামলা, ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনগণ। তাজুলের বাড়ি হারাগাছের নয়া টারী দালালহাট গ্রামে।
এদিকে থানায় হামলার ঘটনায় ২০০ থেকে ৩০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির নামে গতকাল মঙ্গলবার রাতে হারাগাছ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল খালেক বাদী হয়ে মামলা করেছেন।
এ ছাড়া মাদক রাখার অপরাধে নিহত ব্যক্তি তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে হারাগাছ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিয়াজুল ইসলাম বাদী হয়ে অপর একটি মামলা করেছেন। অন্যদিকে নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই মর্তুজা রহমান আবু বাদী হয়ে সোমবার রাতে রংপুর মেট্রোপলিটন হারাগাছ থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা করেছেন।
যা ঘটেছিল
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌর এলাকায় পুলিশের অভিযানের পর তাজুল ইসলাম (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে হারাগাছ মেট্রোপলিটন থানার বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে উত্তেজিত লোকজন লাঠিসোঁটা ও ইট পাথর নিয়ে থানা ঘেরাও করে এবং হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করলে উত্তেজিত জনতা পুলিশের ৪টি গাড়ি ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়।
এ সময় উত্তেজিত জনতা থানার প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে থানা পুলিশ টিয়ারশেল ও গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এরই মধ্যে রংপুর থেকে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ আসলে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোঁড়ে এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশও হামলাকারীদের ওপর পাল্টা গুলি ছোঁড়ে ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। এতে ৪ সাংবাদিক, পুলিশসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়।
আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে স্থানীয় ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায়। সংঘর্ষ থানা এলাকা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থা চলতে থাকে রাত ১০টা পর্যন্ত। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
অপরাধপ্রবণ পুলিশ
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পুলিশ বাহিনীতে বর্তমানে প্রায় সোয়া দুই লাখ সদস্য কর্মরত। তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি ধরতে পুলিশ সদর দপ্তরের বিভিন্ন সেল এখন আগের চেয়ে আরও সক্রিয়। পুলিশ সদর দপ্তরের বাইরে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটেও অনুরূপ সেল কাজ করছে।
প্রতি বছর গড়ে ১৮ থেকে ২৫ হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আসে সদর দপ্তরে। এদের মধ্যে গড়ে প্রায় ২ হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মে জাড়িয়ে পড়ার তথ্য পায় পুলিশ সদর দপ্তর। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী নির্ধারিত হয় তাদের সাজা।
জবাবদিহিতা না থাকা ও কঠোর শাস্তি না হওয়ায় বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। তবে পুলিশের অপরাধ থেকে ফেরানোর জন্য তাদের সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া এবং কোনো না কোনোভাবে কমিউনিটি পুলিশিংয়ে সিভিল সোসাইটির সম্পৃক্ততা বাড়ানো হলে অপরাধ অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৫২
আপনার মতামত জানানঃ