সৌদি আরবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে এবার গুরুত্ব বাড়ছে চলচ্চিত্র শিল্পের। দেশটির নাগরিকদের কাছে সিনেমার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আরও সিনেমা হল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সৌদি সরকার।
জানা যায়, মাজিদ আল-ফুত্তাইম গ্রুপের সিইও ইগনেস লাহাউদ অমদিয়াকে জানান, সৌদি আরবে সিনেমার চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। মাজিদ আল-ফুত্তাইম গ্রুপই ওই অঞ্চলে চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম ভক্স সিনেমার তত্ত্বাবধায়ন করে।
তিনি বলেন, করোনা মহামারির প্রভাব বিশ্বের সব দেশের মতো এখানেও পড়েছে। কিন্তু তারপরও মানুষ সিনেমা দেখে।
তিনি আরো বলেন, গত কয়েকবছরে সৌদি আরবে সিনেমার চাহিদা বেড়েছে। ২০২২ সালের শেষে আরও ১০টি শহরে ভক্স সিনেমা হল নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, ভেনম কিংবা জেমস বন্ড সিরিজের মতো বিশ্বমানের চলচ্চিত্রের পাশাপাশি সৌদি আরবে রয়েছে স্থানীয় কনটেন্টে নির্মিত চলচ্চিত্রের চাহিদা।
লাহাউদ জানান, স্থানীয় কনটেন্টের প্রতি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সৌদি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রভিতার বিকাশ ঘটানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় কনটেন্টের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সৌদি আরবে তরুণ ও সৃজনশীল মেধাবী প্রজন্ম রয়েছে। স্থানীয় মেধার পৃষ্টপোষকতা করে আমরা এই শিল্পের উন্নয়ন করতে চাই।
এদিকে সৌদি আরবের চলচ্চিত্র শিল্পের কীভাবে বিকাশ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে। এ ব্যাপারে আলোচনার জন্য অডিওভিজ্যুয়াল মিডিয়ার জেনারেল কমিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এসরা অ্যাসেরি ওয়ার্নার ব্রাদার্স পিকচার্সের ইএমইএ আঞ্চলিক ডিস্ট্রিবিউশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট টবি টেন্যান্ট এবং মাজিদ আল ফুত্তাইমের অবসর, বিনোদন, সিনেমা এবং জীবনধারার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আল-হাশেমির সঙ্গে দেখা করেছেন।
সৌদির চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ, চলচ্চিত্র বণ্টন, এবং চলচ্চিত্র নির্মাণে পরিবেশকদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণের আলোকে জাতীয় দক্ষতার বিকাশে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা।
২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে ৩৫০টি সিনেমা হল এবং ২৫০০ মুভি স্ক্রিন তৈরির লক্ষ্য স্থির করেছে ক্রাউন প্রিন্স সালমানের সরকার৷
ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বলেছে, সৌদির চলচ্চিত্র শিল্প গুণগত অগ্রগতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যা স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করেছে। বিশেষ করে কমিশন লাইসেন্সিং ও রেটিং সহজ এবং দ্রুততর করার বিষয়টিকে উল্লেখ করেন তারা।
ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেন ২০১৬ সালে৷ সামাজিক-অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নেয়ার গতিপথ নির্ধারণের সেই ঘোষণার আওতায় চলচ্চিত্র শিল্পকেও গুরুত্ব দেয়া হয়৷ রক্ষণশীলতা থেকে উদার, আধুনিকতার পথে যাত্রার অঙ্গিকার জন্ম দেয় চলচ্চিত্র খাতকে ঘিরে অন্তত ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা৷
২০১৮ সালে চলচ্চিত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় সৌদি আরবের সংস্কৃতি ও তথ্য মন্ত্রণালয়৷ সেই থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে নতুন যাত্রা শুরু করেছে চলচ্চিত্র শিল্প৷ আরব চলচ্চিত্র শিল্পের বিশেষজ্ঞ, লেবাননের তথ্যচিত্র পরিচালক এবং প্রযোজক জাইনা স্ফের ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘মহামারি শুরুর আগে প্রতি শুক্রবার শপিং মলগুলোতে থিয়েটারে মুভি দেখতে আসা মানুষদের ভিড় জমতো৷’
গত ৩৫ বছরে নিষেধাজ্ঞার কারণে হারিয়ে যেতে বসা চলচ্চিত্র শিল্প নিষেধের বেড়া সরতেই জেগে ওঠে পূর্ণ উৎসাহে৷ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার চার মাসের মধ্যেই রিয়াদে খুলে যায় প্রথম সিনেমা হলের দরজা৷ ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল সেই প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হয় ‘পিঙ্ক প্যান্থার’৷ নারী এবং পুরুষদের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা ছিল, আবার একসঙ্গে বসে চলচ্চিত্র উপভোগের সুযোগও ছিল সেখানে৷ কোনো আসনই খালি ছিল না৷
২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে ৩৫০টি সিনেমা হল এবং ২৫০০ মুভি স্ক্রিন তৈরির লক্ষ্য স্থির করেছে ক্রাউন প্রিন্স সালমানের সরকার৷ এ কাজ দেখভাল করবে জেনারেল কমিশন ফর অডিওভিজ্যুয়েল মিডিয়া (জিসিএএম)৷ শুধু যে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থাই করা হচ্ছে, তা নয়৷ চলচ্চিত্রকে এক বিলিয়ন ডলারের একটা শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে চায় সরকার৷ এছাড়া ঘরে ঘরে চলচ্চিত্রকে পৌঁছে দিতে বিনোদন খাতে জিডিপির শতকরা তিন ভাগ ব্যয়কে ২০৩০ সালের মধ্যে বাড়িয়ে শতকরা ছয় ভাগ করতে চায় রাজতান্ত্রিক দেশটির সরকার৷
তবে সৌদি আরবের ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও এখনো স্বচ্ছন্দে চলার সুযোগ পাচ্ছে না চলচ্চিত্র৷ ৪২২ জন চলচ্চিত্রপ্রেমী, চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ সমাজের নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে তৈরি সমীক্ষায় ৪৩ ভাগ মানুষই বলেছেন বাণিজ্যিক বিনিয়োগের ঘাটতি চলচ্চিত্রের বিকাশের পথে বড় অন্তরায়৷ সমীক্ষায় অংশ নেয়া ৭৭ ভাগ মানুষ মনে করেন, অনলাইনে দেখানো হলে চলচ্চিত্রকে জাগিয়ে তোলার উদ্যোগ সফল হবে৷ এছাড়া কঠোর সেন্সরশিপকে চলচ্চিত্র শিল্পের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতির পথে বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন অনেকে৷
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৩৫
আপনার মতামত জানানঃ