এশিয়ায় প্রতি বছরই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও খরা আঘাত হানে। এর ফলে প্রতি বছর গড়ে কয়েকশো বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। ২০২০ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৯ম স্থানে রয়েছে।ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরার মতো নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে গত বছর বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১১শ ৩০ কোটি মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৯৬ হাজার ৯৪৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকারও বেশি। মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) প্রকাশিত জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) একটি সমন্বিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি ‘স্টেট অব দ্য ক্লাইমেট ইন এশিয়া ২০২০’ নামে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে এশিয়াজুড়ে চরম আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং শত শত কোটি ডলার খরচ হয়েছে। এতে অবকাঠামো এবং বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (এসক্যাপ) হিসাবে, এশিয়ায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং খরার আঘাতে প্রতি বছর কয়েকশ বিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছর এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় নবমস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এ তালিকায় সবার শীর্ষে চীন। ২০২০ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগে চীনাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতের ক্ষতি ৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।এরপর জাপানের ক্ষতি ৮ হাজার ৩০০ কোটি ও দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষতি দুই হাজার ৪০০ কোটি ডলার।
এশিয়ায় ২ হাজার কোটি ডলার ক্ষতি নিয়ে তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে রাশিয়া। এরপর যথাক্রমে আছে পাকিস্তান (১৫.৮ বিলিয়ন ডলার), থাইল্যান্ড (১২.৫ বিলিয়ন ডলার), ইরান (১২.৩ বিলিয়ন ডলার), বাংলাদেশ (১১.৩ বিলিয়ন ডলার) এবং ভিয়েতনাম (১০.৮ বিলিয়ন ডলার)।
তবে চীন, ভারতের মতো ক্ষতিতে শীর্ষ দেশগুলোর অর্থনীতি ও আয়তন বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বড়, তাই ক্ষতির অংকেও এগিয়ে তারা। কিন্তু, তুলনামূলক ছোট অর্থনীতি ও আকার নিয়েও প্রচণ্ড ক্ষতির শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ।
গত বছরের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে বাংলাদেশে ১৩ কোটি ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে ডব্লিউএমওর প্রতিবেদনে।
২০২০ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৯ম স্থানে রয়েছে।ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরার মতো নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে গত বছর বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১১শ ৩০ কোটি মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৯৬ হাজার ৯৪৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকারও বেশি।
১৯ জেলার মোট এক কোটি মানুষ আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া, তিন লাখ ৩০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এক লাখ ৭৬ হাজার হেক্টরের বেশি কৃষি জমি (ফসল ও মাছ/চিংড়ির খামার) নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ১৪ হাজার গবাদিপশু প্রাণ হারায়।
অন্যদিকে, ইন্সটিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি) এই মাসের শুরুতে বলেছিল যে পরিবেশগত হুমকির জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। সংস্থাটির পরিবেশগত হুমকি প্রতিবেদন ২০২১-এ ১৭৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬৩তম স্থানে রয়েছে।
এদিকে, ডব্লিউএমও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এশিয়ার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ম্যানগ্রোভ বাংলাদেশ (২৩%), মায়ানমার (১৯%), ভারত (১৭%) এবং থাইল্যান্ডে (১৪%) আছে। এর মধ্যে ১৯৯২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ম্যানগ্রোভ বন কমেছে ১৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, এশিয়ায় ২০২০ সাল ছিল উষ্ণতম বছর। এ বছর গড় তাপমাত্রা ১৯৮১-২০১০ সালের গড় তাপমাত্রা থেকে ১ দশমিক ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইদানীংকালে খুব বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা নয় তখনও বৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ুর এই আমূল পরিবর্তনে অভিযোজন করতে গিয়ে বেশি দুর্যোগের কবলে পড়ছে শিশুরা। জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার দৈনন্দিন অনুষঙ্গগুলোর গুণগত মান খারাপ করে দেয়। ফলে শিশুরা নানারকম স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মুখে পড়ে।
তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এখনই। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব উপকূলীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, যেখানে শিশুদের ওপর এর প্রভাব বেশি মারাত্মক। বৈশ্বিক এই সংকট মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর একযোগে কাজের কোনো বিকল্প নেই। সরকারের পাশাপাশি আমরা যদি সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি, তবেই সম্ভব সব দুর্যোগ মোকাবিলা করে শিশুসহ সবার নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১৪
আপনার মতামত জানানঃ