বাংলাদেশের মানুষ বেশি ভাত খায় বলে চালের ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। এ জন্য তিনি খাদ্যাভ্যাস পাল্টানোর তাগিদ দিয়েছেন।
রোববার রাজধানীতে এক কৃষি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এই কথা বলেন। সম্মেলনের বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশের ৫০ বছর, কৃষি রূপান্তর অর্জন।’ বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম ও বণিক বার্তা যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
সম্মেলনে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা অনেক বেশি চাল খাই, ভাত খাই। এজন্য চালের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। আমরা দিনে প্রায় ৪০০ গ্রাম চাল খাই অথচ পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষ ২০০ গ্রাম চালও খায় না।’
মানুষকে ভাত কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেছেন, বিশ্বের মানুষ গড়ে যত চাল খায় বাংলাদেশের মানুষ খায় তার দ্বিগুণ।
চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ঘাটতির তথ্য পাওয়া যায় না। তবে প্রায়ই চালের দাম বেড়ে গেলে সরকার আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়।
সম্প্রতি চালের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়। তবে গত দুই সপ্তাহে তা কিছুটা নিম্নমুখি। তার পরেও বাজার নিয়ন্ত্রণ সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে সরু চালের দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। এটি মূল্যস্ফীতির সার্বিক হারের চেয়ে বেশি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অনেক বেশি চাল খাই, ভাত খাই। এজন্য চালের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। আমরা দিনে প্রায় ৪০০ গ্রাম চাল খাই অথচ পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষ ২০০ গ্রাম চালও খায় না।
তিনি বলেন, ‘খাদ্যের অভাব নেই দেশে। নেই খাদ্যের সংকট ও খাবারের জন্য হাহাকার। কিন্তু মানুষ অধিক ভাত খায় বলে চালের ওপর বেশি চাপ পড়ছে। এতে প্রায়শ সংকট দেখা দিচ্ছে। বাড়ছে দামও।’
ধানজাতীয় দানাদার খাদ্যে বাংলাদেশকে সফল বলেও দাবি করেন মন্ত্রী। বলেন, খাদ্যেও দেশ অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ। আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছর পর দেশেই সারা বছর দেশে আম পাওয়া যাবে বলেও তথ্য দেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন কৃষিপণ্য রপ্তানিও করছি। তবে এই রপ্তানি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। সরকারের লক্ষ্য এখন খাদ্যে পরিপূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। এর পাশাপাশি পুষ্টিজাতীয় খাদ্য নিশ্চিত করতেও উদ্যোগী হয়েছে সরকার। তবে এরজন্য কৃষির বাণিজ্যিক রূপান্তর দরকার।’
এদিকে, চালের বাজারে অস্থিরতা থামছেই না। দেশে রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদনের পরেও কমছে না চালের দাম। চাল আমদানিসহ সরকারের নানা উদ্যোগও যেন কোনো কাজে আসছে না। বরং ক্রমেই আরও বাড়তির দিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম। করোনাকালে এমনিতেই মানুষের আয় কমেছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এরমধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে যেন চিড়ে চ্যাপ্টা সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় চালের মূল্য বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে তাদের।
এ মাসের শুরুতে চালের বাজার থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম আরও ২-৪ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে মোটা পাইজাম ও স্বর্ণা চাল কেজিতে ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই চাল চলতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। বর্তমানে খুচরা বাজারে ২৮ চাল মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৬৫ টাকা পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহে ৫০-৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। ভালো মানের ২৮ চাল ৫৬ টাকা কেজিতে। একইভাবে মাঝারি ধরনের নাজির শাইল ও মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৬৮ টাকা কেজিতে। আর ভালো মানের সরু নাজির ও মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা কেজিতে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চাল কেজিতে বেড়েছে দুই টাকা। এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ এবং গত বছরের তুলনায় মোটা চালে বেড়েছে ১৪.১২ শতাংশ। এ ছাড়া মাঝারি মানের চালের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। আর চিকন চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১৪.২৯ শতাংশ।
এসডব্লিউ/এসএস/২২৫৮
আপনার মতামত জানানঃ