তালিবান সেপ্টেম্বর মাসে আফগানিস্তানে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করার ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো দেশ তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। যেসব গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেখিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজে তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না, সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে— মেয়েদের লেখাপড়া করার অনুমতি না দেওয়া।
তালিবান কাবুল দখলের পর থেকেই শঙ্কা ছিল লেখাপড়ার অধিকার হারাতে যাচ্ছে নারীরা। সরকার গঠনের সময় তালিবান বলেছিল তারা আগের বারের মতো দেশ চালাবে না। অনেক পরিবর্তন আনবে। কিন্তু নারীদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি চাকরিতেও যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
তবে সম্প্রতি প্রাথমিকের মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিগগির মাধ্যমিকেও নারীদের ফেরানো হবে। তবে ঠিক কবে থেকে যেতে পারবে সেটি জানাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সাঈদ খোস্তি আরও বলেন, ‘শিগগির বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাকরি ক্ষেত্রেও নারীরা দ্রুত ফিরতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।’
এমনকি নারী শিক্ষকেরাও কাজে ফিরতে পারবেন। তালিবান ক্ষমতা দখলের পর থেকেই তিনি এমন আলোচনা করে আসছেন। সময় লাগলেও নারীরা অধিকার ফিরে পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এর আগে, আফগানিস্তানের ৩৪ টি প্রদেশের মধ্যে পাঁচটি প্রদেশে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুলগুলো খুলে দেয় তালিবান সরকার। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের উপনির্বাহী পরিচালক ওমর আবদি গত শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বলেন, তালিবানের শিক্ষামন্ত্রী তাকে জানিয়েছেন যে আফগানিস্তানের পাঁচটি প্রদেশের মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুলগুলো খুলে দিয়েছে তালিবান সরকার। এই পাঁচ প্রদেশ হচ্ছে— উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বালখ, জুজজান ও সামানগান, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কুন্দুজ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উরুজগান।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে তালিবান শাসনামলে নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জনজীবনে অংশগ্রহণের কোনও সুযোগ ছিল না। অধিকাংশ পেশায় নারীদের কাজের অনুমতি ছিল না। নারীরা তাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখতে বাধ্য হতো। কোনও নারী ব্যভিচারী অভিযুক্ত হলে তাকে জনসম্মুখে অত্যাচার করা হতো। তাদের চলাচলের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ ছিল। তাদের নিকট পুরুষ আত্মীয়ের সঙ্গ ছাড়া গৃহত্যাগের অনুমতি ছিল না। তাছাড়া তাদের অন্যায়ভাবে শাস্তি পেতে হতো।
গত বিশ বছরে আফগানিস্তানে নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ। তবে আবারও তালিবানের শাসন ফেরায় হুমকির মুখে আফগান নারীরা। তিনটি ঘটনা সবথেকে বেশি শঙ্কার কারণ।
প্রথমত, জুলাইয়ের প্রথম দিকে বাদাখশান ও তাখার প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের কাছে একটি আদেশ জারি করে ১৫ বছরোর্ধ্ব মেয়েদের, ৪৫ বছরের নিচে থাকা বিধবাদের একটি তালিকা চাওয়া হয়েছিল তালিবান যোদ্ধাদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য।
দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তান দখল নিশ্চিত করার পর হেরাতে প্রদেশে প্রথম ফতোয়া জারি করে তালিবান। ফতোয়া অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়াশোনা করতে পারবেন না ছেলেমেয়েরা।
তৃতীয়ত, গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ১৫ যোদ্ধার জন্য খাবার রান্নার আদেশ অমান্য করায় এক নারীকে একে-৪৭ রাইফেল দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে তালিবানরা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৫০
আপনার মতামত জানানঃ