যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের কুদস বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল কাশেম সোলাইমানি এবং আরও নয়জন। গত বছরের জানুয়ারিতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ঘটনাটির তদন্ত করছিল জাতিসংঘ।
তবে এবার পুরনো আগুন উস্কে দিয়ে ইহুদিবাদী ইসরায়েল প্রথমবারের মতো ইরানের কুদস ফোর্সের সাবেক কমান্ডার লে. জেনারেল কাসেম সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডে নিজের হাত থাকার কথা স্বীকার করেছে। ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা আমান-এর পরিচালক তামির হাইম্যানের বরাত দিয়ে ইরাকি বার্তা সংস্থা আল-মুত্তালা’ এ খবর দিয়েছে।
হাইম্যান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমেরিকার হাতে জেনারেল সোলাইমানি ও ইরাকের হাশদ আশ-শাবি বাহিনীর প্রধান আবু মাহদি আল-মুহান্দিসের হত্যাকাণ্ডে তেল আবিবের হাত ছিল।
হাইম্যান আরো বলেন, তার নেতৃত্বাধীন সংস্থা ‘আমান’ জেনারেল সোলাইমানির গতিবিধির তথ্য আমেরিকার হাতে তুলে দেয়ার পরই তাকে মার্কিন সেনারা হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে।
২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরের বাইরে মার্কিন সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীর ড্রোন হামলায় শহীদ হন ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলাইমানি ও ইরাকের পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সের উপ-প্রধান আবু মাহদি আল-মুহান্দেসসহ ১০ সামরিক কর্মকর্তা। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে এই পাশবিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরে বাগদাদে গিয়েছিলেন জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। ইরাক সফরে যাওয়ার আগে তিনি সিরিয়া সফরে যান এবং আঙ্কারা থেকে একটি বিশেষ বিমানে বাগদান আসেন।
বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের এক নম্বর টার্গেট ছিলেন ইরানি এই জেনারেল। ইসরায়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ বুশ এবং তারপর বারাক ওবামা পর্যন্ত তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেও পরিণতির কথা ভেবে পরে পিছিয়ে গিয়েছিলেন।
সোলাইমানিকে নির্ভুল নিশানায় হত্যা করে উচ্ছ্বসিত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন। সোলাইমানিকে হত্যার ঝুঁকি ট্রাম্প নিয়েছিল নির্বাচনী প্রচারণাকে বেগবান করতে, এমনটাই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের সাংবাদিক জুলিয়ান বার্গার সে সময় বলেন, নভেম্বরে নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সোলেইমানিকে হত্যার এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি মনে করেন, ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার যে ঘটনা বারাক ওবামার দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের প্রচারণায় প্রধান একটি বিষয় হয়ে উঠেছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো সেরকমই কিছু করতে চেয়েছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিউত্তরে ইরাকে আল-আসাদ ও ইরবিলে দুটি মার্কিন ঘাঁটি বরাবর ২২টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। এটাকে সোলাইমানি হত্যার ঘটনায় ‘চপেটাঘাত’ বলে আখ্যায়িত করেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ জানান, আত্মরক্ষায় পাল্টা জবাব দেওয়ার মধ্য দিয়ে হামলার সমাপ্তি টেনেছে ইরান। তাঁরা আর যুদ্ধ বা উত্তেজনা চান না। তবে ট্রাম্প নিশ্চিত করেন, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে, ট্রাম্প টুইটে ইরানকে হুঁশিয়ার করে জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ৫২টি স্থাপনা হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ঠিক করে রেখেছে। ইরান হামলা চালানে সেসব স্থানে ‘দ্রুত ও শক্তিশালী হামলা’ চালাবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই মন্তব্য করে বিপাকে পড়েন ট্রাম্প। কারণ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনায় হামলা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধের শামিল।
জানা যায়, সোলাইমানির এতোটাই জনপ্রিয় ছিল ইরানে যে তার জন্মস্থান কেরমানে জানাজার সময় পদদলিত হয়ে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ। জানাজায় ১০ লাখের বেশি মানুষ অংশ নেয় বলে ধারণা করা হয়। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহোল্লাহ খোমেনির জানাজার পর ইরানে আর কোনো জানাজায় এত মানুষের উপস্থিতির ঘটনা ঘটেনি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬০৮
আপনার মতামত জানানঃ